আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের মানুষ প্রাইভেট খাতের কারণে বিরক্ত ও নিরুপায় হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের চিকিৎসা খাতে ৪–৫ বিলিয়ন ডলারের বাজার থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এই বাজার পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে পারছে না, তা উদ্বেগের। “যদি দেশের হাসপাতালে সেবা যথাযথভাবে দেওয়া হয়, মানুষ বিদেশে কখনও যাবে না। এই বাজার দখল করলে মালিকদেরও লাভ, দেশেরও লাভ,” তিনি উল্লেখ করেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় ড. আসিফ নজরুল এ বক্তব্য দেন।
তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে গরিব রোগীদের ওপর অনর্থক টেস্ট আরোপ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, তার বাড়ির একজন সাহায্যপ্রার্থী ১৪টি টেস্ট দেওয়ার পরও কোনো কার্যকর চিকিৎসা পাননি। “এ ধরনের অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। গরিব ও দরিদ্র রোগীদের উপর অনর্থক পরীক্ষা বন্ধ করা জরুরি।”
ড. আসিফ নজরুল প্রাইভেট খাতের চিকিৎসকদের সতর্ক করে বলেন, “নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মতো প্রথা বন্ধ করতে হবে। ডাক্তাররা যদি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে যান, তাহলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তিনি নার্স ও হাসপাতাল কর্মীদের ন্যায্য বেতন ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “নার্সদের যদি বেতন মাত্র ১২ হাজার টাকা হয়, তারা মানসম্মত সেবা দিতে পারবেন না। প্রাইভেট খাতের মালিকদের উচিত সামান্য লাভের বিনিময়ে কর্মীর সঠিক সম্মান নিশ্চিত করা। এতে সেবা ও মানবিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “দেশে চিকিৎসা সেবার সক্ষমতা যথেষ্ট। ভারত বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য মানুষ যেতেও চায় না। করোনাকালেও প্রমাণ হয়েছে, দেশের হাসপাতাল ও ডাক্তাররা যথাযথ সেবা দিতে সক্ষম। শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক মনোভাব দরকার।”
ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য দেশের চিকিৎসা খাতে নৈতিক দায়িত্ব ও মানবিক মনোভাব জোরদার করার আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি প্রাইভেট খাতের মালিকদের সতর্ক করে বলেন, লাভের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা।