বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহের যুগান্তকারী যাত্রা শুরু হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো নতুন প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে সময় ও অর্থ— উভয় ক্ষেত্রেই সাশ্রয় ঘটবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পদ্মা ওয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসাব অনুযায়ী, নৌপথে ট্যাংকারে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহনে বার্ষিক খরচ হতো প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। কিন্তু পাইপলাইন ব্যবস্থায় একই পরিমাণ তেল পরিবহনে খরচ হবে মাত্র ৯০ কোটি টাকা। ফলে বছরে প্রায় ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হবে। পাশাপাশি সিস্টেম লস ও চুরি ঠেকানো গেলে এই সাশ্রয় বেড়ে বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
বিপিসির বাস্তবায়নে এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের নির্মাণে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনটি চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পাইপলাইন ২২টি নদী ও খাল অতিক্রম করেছে এবং এর সঙ্গে নয়টি আধুনিক স্টেশন ও ডিপো স্থাপন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিক টন এবং বছরে সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল পরিবহন করা যাবে। আগে নৌপথে ট্যাংকারে পরিবহনে সময় লাগত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা, এখন তা কমে মাত্র ১২ ঘণ্টায় নেমে এসেছে।
পাইপলাইন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড প্রযুক্তি। ডিপোতে তেল গ্রহণ থেকে সরবরাহ পর্যন্ত সবকিছু মনিটর হবে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে। তেলের তাপমাত্রা, ওজন ও পরিবহন নিরাপত্তা সবই ২৪ ঘণ্টা নজরদারির আওতায় থাকবে।
প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই পরিবহন সফল হয়েছে। এখন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত, নিরাপদ ও কম খরচে তেল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও করোনাজনিত বিলম্বে তা শেষ হয় চলতি বছরের মার্চে। চূড়ান্ত খরচ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
এই উদ্যোগ দেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী অগ্রগতি এনে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পাইপলাইন চালু হওয়ায় শুধু অর্থ সাশ্রয়ই নয়, বরং জ্বালানি নিরাপত্তা ও দক্ষতাও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।