লালমনিরহাটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে গত চার দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে জেলার তিস্তাপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর থেকে পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও স্থানীয়দের দুর্ভোগ এখনো কমেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুর ২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯২ মিটার, যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচে। যদিও পানি কমতে শুরু করেছে, তবে চার দিনের টানা প্লাবনে তিস্তাপাড়ের প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার অন্তত ২৫টির বেশি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গ্রামের ভেতরের রাস্তা, স্কুল, মসজিদ, হাট-বাজার পানির নিচে ডুবে আছে। কোথাও কোমরসমান, কোথাও আবার বুকসমান পানি।
পাটগ্রামের দহগ্রাম; হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী; আদিতমারীর মহিষখোচা ও সদর উপজেলার কুলাঘাট, খুনিয়াগাছ, মোগলহাটসহ অসংখ্য গ্রামে পানিবন্দি পরিবারগুলো এখন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
মানুষের দুর্ভোগ
গোবর্দ্ধন গ্রামের ফরিদ মিয়া বলেন, “চার দিন ধরে পানিবন্দি। চারপাশে শুধু পানি। রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভয় হয়, কখন ঘর ভেঙে পড়ে যায়।”
গড্ডিমারী গ্রামের গৃহিণী সালমা বেগম বলেন, “সব রাস্তা পানির নিচে। রান্না, খাওয়া, বাচ্চাদের পড়াশোনা— সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। শিশুরা পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাতেও আতঙ্কে থাকি।”
নারীরা জানিয়েছেন, রান্নার জন্য কেউ মাচার ওপর চুলা বসাচ্ছেন, কেউবা উঁচু বাঁধে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক পরিবার বাঁধে বা উঁচু রাস্তায় পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে গবাদিপশু রেখেছেন। বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।
নতুন আশঙ্কা
পানি কমতে শুরু করলেও এখন দেখা দিচ্ছে নতুন বিপদ। প্লাবিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ যেমন—ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও সর্দি-জ্বরের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।
প্রশাসনের তৎপরতা
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, “তিস্তায় পানি কমলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পানি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছি।”
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার ও জিআর চাল বিতরণ চলছে। পাশাপাশি আরও বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং ধাপে ধাপে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
সারসংক্ষেপ
তিস্তায় পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসলেও বন্যার কারণে ভোগান্তি কমেনি লালমনিরহাটের মানুষের। ঘরে ঘরে দুর্ভোগ, অনিশ্চয়তা আর পানিবাহিত রোগের হুমকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী নিশ্চিত করবে।