রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে পাঁচ দিন বয়সী এক নবজাতকের হাত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চিকিৎসা অবহেলায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণও জানতে চাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটটি দায়ের করেছিলেন নবজাতকের বাবা মো. নূরের সাফাহ্। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. শফিকুল ইসলাম (সোহেল)।
ঘটনার বিবরণে নবজাতকের বাবা জানান, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের শিশুকে উচ্চ বিলিরুবিন মাত্রার কারণে ফটোথেরাপির জন্য ভর্তি করা হয় ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসা চলাকালীন সময় শিশুর সঙ্গে মা বা পরিবারের অন্য কেউ থাকতে পারবে না, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে ব্রেস্ট ফিডিং করা যাবে।
তিনি জানান, রাত ১২টায় শিশু স্বাভাবিকভাবে খেয়েছিল, কিন্তু সকাল ৭টায় গিয়ে দেখা যায় শিশুটি ঘুমিয়ে আছে এবং জাগানো যাচ্ছে না। হাসপাতালের নার্সরা জানান, জেগে উঠলে খাওয়ানো হবে। তবে সারা দিন শিশুটি ঘুমিয়েই কাটায়। পরের দিন সকালে হাসপাতাল জানায় বিলিরুবিনের মাত্রা কমে গেছে, তাই ডিসচার্জ দেওয়া হবে।
বাড়িতে নিয়ে আসার পর কাঁথা খুলে দেখা যায়, শিশুর ডান হাত কনুইয়ের উপরে ভাঙা এবং স্পর্শ করলেই কান্না করছে। বিষয়টি জানাতে পুনরায় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দাবি করেন, ডিসচার্জের সময় হাত স্বাভাবিক ছিল, বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরই আঘাত লেগেছে।
নবজাতকের বাবা অভিযোগ করেন, তাদের সন্দেহ—রাতের কোনো একসময় হাত ভেঙে গেছে এবং বিষয়টি গোপন রাখতে শিশুকে সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। শিশুর জীবনরক্ষা ও সঠিক চিকিৎসার জন্য তারা দ্রুত শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে যান এবং লিখিত অভিযোগ দেন।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হাইকোর্ট তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
এই ঘটনা চিকিৎসা সেবায় মানবিক দায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে নবজাতকের মতো অসহায় রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা অপরিহার্য।