ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদার তপনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসা থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার তপনের স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম শিমু অভিযোগ করে বলেন, “তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। গত কয়েকদিন ধরে চিকিৎসার জন্য বাসাতেই ছিলেন। হঠাৎ করেই ডিবি পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গেল।”
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই খায়রুল বাশার মজুমদার তপন আত্মগোপনে ছিলেন। এর একদিন আগে, ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা একদফা কর্মসূচির সমর্থনে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে জড়ো হন হাজারো ছাত্র-জনতা। দুপুর দেড়টার দিকে ট্রাংক রোড থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মহিপালের দিকে এগোতে থাকেন।
এসময় হঠাৎ গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। এসি মার্কেট সংলগ্ন এলাকা থেকে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের দিকে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। মুহূর্তেই মহিপাল ফ্লাইওভার থেকে সার্কিট হাউস রোডের পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত রক্তাক্ত লাশ ছড়িয়ে পড়ে—সেদিন প্রাণ হারান শ্রাবণ, শিহাব, শাহীসহ ৭ জন। আহত হন চার শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সাধারণ পথচারীও ছিলেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, “রাজধানীর শান্তিনগর থেকে খায়রুল বাশার মজুমদার তপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
এই ঘটনায় ফেনীতে মোট ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে—এর মধ্যে ৭টি হত্যা মামলা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলা। এসব মামলায় ২,১৯৯ জন এজাহারভুক্ত এবং ৪ হাজারের বেশি অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। ইতিমধ্যেই ১ হাজারের বেশি আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১১ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একটি মামলার অভিযোগপত্রও ইতোমধ্যে দাখিল হয়েছে।