ই-বাংলাদেশ ডেস্ক চীনের বিশাল বাজার বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই এক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। কিন্তু চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ট্যারিফ সংকটের কারণে এবার সেই বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে—যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগে ধস: পরিসংখ্যান যা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিজনেস কাউন্সিল (USCBC) পরিচালিত ২০২৫ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ বছর মাত্র ৪৮% মার্কিন কোম্পানি চীনে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। অথচ গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৮০%। বিশ্লেষকদের মতে, এই হঠাৎ বিনিয়োগ হ্রাস মূলত চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের অনিশ্চয়তা, বাড়তি ট্যারিফ, ও স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতার তীব্রতা থেকেই এসেছে।
ট্যারিফ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন করে বাণিজ্য সংঘাত শুরু হওয়ায় ব্যবসায়িক আস্থায় চরম ধাক্কা লাগে। USCBC-এর রিপোর্ট বলছে: “ট্যারিফ বৃদ্ধি এবং বারবার ব্যর্থ আলোচনার ফলে মার্কিন ব্যবসায়িক নেতাদের আস্থা হ্রাস পেয়েছে এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো ভেঙে পড়েছে।” ২০২৪ সালে যেখানে ট্যারিফ ছিল অষ্টম প্রধান উদ্বেগ, ২০২৫ সালে তা উঠে এসেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জে।
ক্ষতির মুখে মার্কিন কোম্পানিগুলো ● ৭০% কোম্পানি সরাসরি ট্যারিফ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। ● ৮৮% প্রতিষ্ঠান বলেছে, মার্কিন-চীন সম্পর্কের অনিশ্চয়তার ফলে তারা প্রভাবিত। ● ৩৫% কোম্পানি মার্কিন ট্যারিফের কারণে বিক্রি হারিয়েছে। ● ২৭% বলেছে, চীনা ট্যারিফে তাদের ক্ষতি হয়েছে—যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
বিকল্প বাজারে ঝুঁকছে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের পরিবর্তে কোম্পানিগুলো এখন সাপ্লাই চেইন পুনর্গঠন ও মূল্য পুনর্মূল্যায়ন করছে। তারা নতুন করে নজর দিচ্ছে— ● সাউথইস্ট এশিয়া ● ভারত ● মেক্সিকো—এই তিন বাজারে। চীন এখনও গুরুত্বপূর্ণ—‘উপেক্ষা করার মতো নয়’ তবে সব নেতিবাচকতার মাঝেও USCBC বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো চীনা বাজার পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারবে না। ● ২৮% কোম্পানি বলেছে, চীনে না থাকলে তারা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। ● ৪০% বলছে, চীন তাদের বৈশ্বিক কৌশলের মূল অংশ।
USCBC প্রেসিডেন্ট শন স্টেইন বলেন, “চীনের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কাজ করা অপরিহার্য। এটি শুধুমাত্র একটি বাজার নয়, বরং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও দক্ষতার চর্চার ক্ষেত্রও।” সামনে কী অপেক্ষা করছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মার্কিন-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি অব্যাহত থাকে এবং ট্যারিফ কমানো না হয়, তাহলে এই বিনিয়োগ হ্রাস আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
চীন সরকারের সঙ্গে মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সাম্প্রতিক আলোচনায় কিছুটা আশাবাদ দেখা গেলেও, এখনই স্থায়ী সমাধানের আশা করা কঠিন। চীনের বাজার যত বড়ই হোক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলে বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো আরও নিরাপদ বিকল্প খুঁজবে। তাই বাজার ধরে রাখতে হলে চীনের উচিত হবে ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও স্থিতিশীল ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা।