অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতে এসেছে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন। নীতিগত সংস্কার, উন্নত যাত্রীসেবা, বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বহুমুখী পদক্ষেপ খাতটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
শাহজালালে যাত্রীসেবায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা) অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে। যাত্রীবান্ধব পরিবেশ, প্রবাসীবান্ধব লাউঞ্জ, ২৬টি ই-গেট, দ্রুত লাগেজ হ্যান্ডলিং, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ২৪/৭ হটলাইন (১৩৬০০) যাত্রী অভিজ্ঞতা বদলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রফেরত যাত্রী তাসফিয়া কিশোর বলেন, “আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতাম। এবার দ্রুত ব্যাগ পেয়েছি।”
চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কক্সবাজারে
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের পর্যটন অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। সমুদ্রতীরে নির্মিত বিস্তৃত রানওয়ে ও আধুনিক টার্মিনাল ভবন এই বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক হাবে পরিণত করছে। ইতোমধ্যে এয়ার এরাবিয়া কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে।
কার্গো খাতেও বিপ্লব
ভারতের রপ্তানি স্থগিতের প্রেক্ষিতে সরকার কার্গো সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতালি, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নতুন ফ্লাইট চালু হয়েছে। জাইকার সহায়তায় ঢাকার কার্গো ভিলেজে আধুনিক স্ক্রিনিং ও তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত স্টোরেজ স্থাপিত হচ্ছে। সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কার্গো কার্যক্রম শুরু করেছে।
তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পথে
২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর অপেক্ষায়। এটি চালু হলে যাত্রী ও রপ্তানি পণ্য পরিবহন সক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়বে। উন্নত প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবে।
নাজুক বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা
বগুড়াসহ অন্তত ছয়টি অনুন্নত বা বন্ধ বিমানবন্দর পুনরায় চালু করতে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। বগুড়ার জন্য ১,২০০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
নীতিমালা সংস্কার ও দক্ষতা উন্নয়ন
প্রায় ৪০ বছর পর ১৯৮৪ সালের বিমান চলাচল বিধিমালা সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন খসড়া নীতিমালায় নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব, প্রতিযোগিতা এবং প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ICAO এবং IATA’র সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
বিমান বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “এই অগ্রগতি শুধু পরিকাঠামো নয়, গোটা এভিয়েশন নেটওয়ার্ককে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দিয়েছে।”