• হোম > বাংলাদেশ > বিদ্যুৎ খাতে বৈদেশিক বকেয়া পরিশোধে আন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি

বিদ্যুৎ খাতে বৈদেশিক বকেয়া পরিশোধে আন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি

  • বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৪
  • ৫৭

---

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত এক বছরে বৈদেশিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যার মধ্যে ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া বিলও রয়েছে। আদানির মোট বকেয়া ছিল ৭ হাজার ৯৩৪.৮৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে বর্তমানে ২ হাজার ৩৬৩.৫০ কোটি টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।

এছাড়া, মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকার সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। তরল জ্বালানি-ভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্ভিস চার্জ ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনায় ৪৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া, তরল জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি শিপমেন্টে ১৫ হাজার মেট্রিক টনের পরিবর্তে ২০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করায় সাশ্রয় হবে আরও ৩৫৪ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ ৮.৪৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করায়, বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য (৮.৯৫ টাকা) অপেক্ষা কম হওয়ায় বছরে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

এছাড়া, মেয়াদোত্তীর্ণ দশটি পুরাতন রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ৫২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর ৬ শতাংশ উৎসে কর হ্রাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ৯ হাজার ২১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২৫ সালের ৬ মে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ১৬ জুন গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। এ নীতিমালার আওতায় জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারি অফিস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ওপেক্স বা কেপেক্স মডেলে সোলার প্যানেল বসানো হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। এছাড়া নেট মিটারিং গাইডলাইন প্রণয়নের এবং সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য মার্চেন্ট পাওয়ার পলিসি প্রণয়নের কাজও চলছে। এ পলিসি চূড়ান্তকরণের জন্য স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে এবং উপদেষ্টা পরিষদের জুলাইয়ের বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হয়েছে।

সরকার চারটি ধাপে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে মোট ৫৫টি স্থানে ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন সাবস্টেশনের ক্ষমতা অনুসারে প্যাকেজ ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং একাধিক পর্যায়ে দরপত্র দলিল জমাও পড়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাউবি) বড় পুকুরিয়ায় ২০ মেগাওয়াট, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ মেগাওয়াট এবং কাপ্তাইয়ে ৭.৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবেশ দূষণ হ্রাসে মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইএসডিই অর্থায়নে ইজিসিবি কর্তৃক সোনাগাজীতে ৩২২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং কেএফডব্লিউ-এর অর্থায়নে আরপিসিএল গজারিয়ায় ১০ মেগাওয়াট ব্যাটারি স্টোরেজসহ ৬৫ মেগাওয়াট সোলার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

বিদ্যুৎ নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা রোধে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দপ্তর নিয়মিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক স্থাপনা পরিদর্শন করছে এবং ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সমাধান করছে। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি স্থিতিশীল রাখতে স্পিনিং রিজার্ভ বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এফজিএমও সিস্টেম চালু করায় ফ্রিকোয়েন্সি ফ্লাকচুয়েশন কমেছে। বর্তমানে এফজিএমও পদ্ধতিতে পরিচালনাযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৬১টি হলেও গ্যাস সংকটে এর মধ্যে কিছু ফিক্সলোডে চলছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন এবং ২০২৫ সালের একই সময়ের তুলনায় ফ্রিকোয়েন্সি ‘নরমাল রেঞ্জে’ (৪৯.৫–৫০.৫ Hz) থাকার সময়কাল ১৮৭৬ ঘণ্টা বেড়েছে, যা একটি বড় অগ্রগতি। ভর্তুকির ক্ষেত্রেও সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে—গত বছর যেখানে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা, সেখানে চলতি বছরে তা কমিয়ে আনা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকায়।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3525 ,   Print Date & Time: Sunday, 12 October 2025, 01:08:28 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh