অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত এক বছরে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পৃথক দুটি সভায় সভাপতিত্ব করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই পরিবর্তন শুধু বাইরের চোখ দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন অন্তর্দৃষ্টি। উপরিভাগ দেখে মন্তব্য করলেই পুরো চিত্র বোঝা যায় না। এই কয়েক মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগে দেশের অর্থনীতি এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত ছিল, যা থেকে এখন অনেকটাই স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে।
তবে অর্থ উপদেষ্টা স্বীকার করেন, সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি আরও কমিয়ে আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জ্বালানি খাতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ গত সময়গুলোতে এই খাতটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন এটি কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি হঠাৎ কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। এটি সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। খাদ্যপণ্যে কিছুটা স্বস্তি এলেও নন-ফুড মূল্যস্ফীতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক হারে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জন্য মোটামুটি ভালো অবস্থান তৈরি করেছে। তিনি বলেন, নিটওয়্যার কারখানাগুলো এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, তবে ওভেন কারখানাগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়বে, কারণ তাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ নেই। যদিও চুক্তিটি এখনো স্বাক্ষর হয়নি, তাই কোন খাতে শুল্ক কমাতে হবে তা এখনো বিশ্লেষণাধীন রয়েছে।
সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কিছু স্বল্পমেয়াদি আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারে আরও সময় লাগবে। তিনি জানান, ব্যাংকিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং তা বাস্তবায়নে সময় লাগবে। একইভাবে পুঁজিবাজারেও কিছু সংস্কার চলমান রয়েছে, যার ফলে ধীরে ধীরে অগ্রগতি দেখা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনবিআর অধ্যাদেশে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে এনবিআরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হবে— রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমার লক্ষ্য, ডিসেম্বরের মধ্যে আমি অবশ্যই কিছু একটা করব।”
তিনি আরও বলেন, সরকার এমন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য এবং দেশের বাস্তব প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার ও টেকসই পথে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোনো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।