রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে বহুল আলোচিত রিভিউ মামলার রায় অবশেষে আগামী ৭ আগস্ট (বুধবার) ঘোষণা করা হবে। এর আগে ৩০ জুলাই রিভিউ শুনানি শেষে ৬ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করা হলেও, আজ (৫ আগস্ট) সর্বোচ্চ আদালত নতুন করে ৭ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন।
রিভিউ মামলার শুনানি নেয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ।
মামলার পেছনের পটভূমি
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রম ঠিক করতে ১৯৮৬ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একাধিকবার সংশোধন হয়।
তবে, জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এই তালিকায় সাংবিধানিক ও সংবিধান স্বীকৃত পদধারীদের প্রশাসন ক্যাডারের নিচে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের সংশোধিত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সকে অবৈধ ঘোষণা করে।
আপিল ও রিভিউ পর্যায়ে উত্তরণ
রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে আপিল করে এবং ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের নির্দেশনার কিছু সংশোধন করে তিনটি নির্দেশনা দেয়:
-
সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন, অতএব প্রাধান্য হবে সাংবিধানিক পদধারীদের।
-
জেলা জজ ও সমমর্যাদাসম্পন্নরা সচিবদের সঙ্গে একই (১৬ নম্বর) অবস্থানে থাকবেন।
-
জেলা জজদের পরেই অতিরিক্ত সচিবরা ১৭ নম্বরে অবস্থান করবেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের ওই রায়ের বিরুদ্ধেই রিভিউ আবেদন করা হয়।
এই রিভিউ আবেদনে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরাও পক্ষভুক্ত হন।
শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা :
-মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন
-জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির ও অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী
-ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ূম
ইন্টারভেনর হিসেবে যুক্ত ছিলেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)
গুরুত্বপূর্ণতা
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দেশের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কে কার আগে বসবেন বা থাকবেন তা নির্ধারণ করে। এই তালিকার মাধ্যমে সরকারি, বিচারিক ও সাংবিধানিক ব্যক্তিদের আধিকার ও মর্যাদার প্রতিফলন ঘটে। তাই এ রায়ের প্রভাব প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হতে পারে।