২০২৫ সালের শুরুটা বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য ছিল দারুণ এক ইতিবাচক চিত্র। রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পরেও দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (FDI) রেকর্ড পরিমাণ প্রবাহ দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১৪.৩১% বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবাহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আস্থার প্রতিচ্ছবি। যদিও এখনো উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক ঋণের চাপ ও বিনিময় হারের অস্থিরতার মতো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবু বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের আন্তরিকতা প্রশংসনীয়।
বিনিয়োগের উত্থান: সংখ্যাই বলছে ইতিবাচক গল্প
২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে এফডিআই ছিল ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৫ সালে তা বেড়ে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এমনকি আগের প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪) এর তুলনায়ও এই প্রবাহ ৭৬.৩১% বেশি।
মূলধনী বিনিয়োগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
বিনিয়োগ সম্মেলন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’-এ ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধির অংশগ্রহণে প্রায় ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব আসে। বিডা ও বেজা একযোগে কাজ করে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, পাইপলাইন উন্নয়ন, এবং নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে মনোযোগী।
জাতীয় মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০৪৬ সালের মধ্যে ২০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রস্তুত এই মাস্টার প্ল্যান দেশের ভারসাম্যপূর্ণ শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ডিজিটাল উন্নয়ন: সহজতর হচ্ছে সেবা
বিডা তাদের নতুন ডিজাইনকৃত ওয়েবসাইট ও ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (OSS) পোর্টালের হালনাগাদ সংস্করণ চালু করেছে। এই পোর্টাল এখন ৩৫টি সরকারি সংস্থা ও ১২টি ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ১৩৩টি সেবা এক প্ল্যাটফর্মে দিচ্ছে।
বেপজা’র নতুন মাইলফলক
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজা‘র অধীন ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ২৯২.৭৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। চীন, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ ৯টি দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ৩৩টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯৭.৪৮ মিলিয়ন ডলার, যা ৫৯ হাজার ৪০৮টি সম্ভাব্য কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কৃষিভিত্তিক পণ্য, খেলনা, চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মনজুর হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে বিনিয়োগ প্রবাহ আরও বাড়বে।” এফবিসিসিআই এবং এনবিআরের নীতি সংস্কার উদ্যোগগুলিও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও সহায়ক করে তুলছে।
বাংলাদেশ এখন কেবল বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্য নয়, বরং একটি নিরাপদ, লাভজনক এবং টেকসই ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।