ঢাকা, ২ আগস্ট — অবশেষে সরকার স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তিন মাস পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি স্বল্পমেয়াদি (তিন মাসের) কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে, যার আওতায় দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত ২৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল শাখা ও সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে উপস্থাপন করতে। এরপর ৬ আগস্ট এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য আলোচনা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। অংশ নেবেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবরা এবং অধীনস্থ সংস্থাগুলোর প্রধানরা।
প্রসঙ্গত, ৫ মে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন সরকারকে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুপারিশ ছিল:
● প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া
● সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা
● একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠন করা
● স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনিক সংস্কার
কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে আনুমানিক দুই বছর সময় লাগবে এবং এর জন্য একটি শক্তিশালী আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন জরুরি।
তবে এতদিনেও সেই কমিটি গঠিত না হওয়ায় এবং সুপারিশ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কমিশনের একজন সদস্য সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন।
তবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, “আমরা শাখাগুলোর দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি এবং ৬ আগস্টের বৈঠকের পর বাস্তবায়নের স্পষ্ট রূপরেখা নির্ধারণ করতে পারবো।”
কেন এই সংস্কার জরুরি?
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত বর্তমানে অনেক জটিল সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:
অর্থায়নের ঘাটতি – জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ অত্যন্ত সীমিত, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট – গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকায় ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য পেশাজীবীর অভাব প্রকট।
ব্যক্তিগত ব্যয়ের ভার – স্বাস্থ্যসেবার অধিকাংশ খরচ সাধারণ মানুষকে নিজ পকেট থেকে বহন করতে হয়, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দুর্বিষহ।
অসম প্রবেশাধিকার – নগর ও গ্রামীণ, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার এখনও সমতাভিত্তিক নয়।
দুর্বল শাসন ও জবাবদিহিতা – দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার অভাব স্বাস্থ্যখাতের মান কমিয়ে দিয়েছে।
ফলে, অনেক মানুষ মানসম্পন্ন চিকিৎসা না পেয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য ব্যয়বহুল পথে পা বাড়াচ্ছেন, যা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অপচয়ের একটি বড় উৎস।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের প্রয়োজন শুধু সময়োপযোগী নয়, বরং জাতীয় উন্নয়ন ও মানবিক নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
মূল্যায়ন:
এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্যসেবায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সময়ক্ষেপণ ও প্রশাসনিক নিস্ক্রিয়তা এ সংস্কারের গতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং নাগরিক পর্যায়ের চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সংস্কার বাস্তবায়নে।