ঢাকা, ৩০ জুলাই:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কার্যক্রম জোরদার করা এবং প্রাণিসম্পদ খাতের আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “দেশ একটি বিশাল সম্ভাবনাময় সুযোগ হারাচ্ছে।”
আজ বুধবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী মন্ত্রণালয়, যার দায়িত্বে রয়েছে সমুদ্র ও খামার উভয়ের তত্ত্বাবধান। কিন্তু আমরা এখনও গভীর সমুদ্রের সম্পূর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি।”
তিনি গভীর সমুদ্রে মৎস্য সম্ভাবনার যথাযথ জরিপ ও তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আমাদের জানতে হবে—আমাদের কী ধরনের মৎস্য সম্পদ রয়েছে, কী হারাচ্ছি এবং পিছিয়ে থাকার কারণ কী। সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই খাত আমাদের অর্থনীতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।”
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে গবেষণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ ও নতুন ধারণা আনতে হবে, যা বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। শুধু গবেষণার জন্য গবেষণা নয়—গবেষণা হতে হবে নীতিনির্ধারণে কার্যকর।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে গভীর সমুদ্র বিষয়ক অধ্যয়ন যুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা যায়।”
প্রাণিসম্পদ খাতেও আধুনিকায়নের আহ্বান
প্রাণিসম্পদ খাতের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “খাদ্য ঘাটতি, রোগ ও উচ্চমূল্যের ভ্যাকসিন গবাদিপশু খামারিদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়ভাবে পশুখাদ্য ও টিকা উৎপাদনই হতে পারে এ সমস্যার টেকসই সমাধান।”
তিনি হালাল মাংস বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, “বিশ্ববাজারে হালাল মাংসের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। মালয়েশিয়ার মতো দেশ এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। আমাদের উচিত সম্ভাবনাগুলো যাচাই করে প্রস্তুতি নেওয়া।”
চামড়া বাজার ও চিড়িয়াখানার সংস্কারের ওপর জোর
গবাদিপশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট ইস্যুতে তিনি বলেন, “আগামী ঈদুল আজহার আগে থেকেই পূর্বপরিকল্পনা নিতে হবে। গরুর চামড়ার জন্য একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও কার্যকর বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।”
জাতীয় চিড়িয়াখানার দুরবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “শুনেছি পশু-পাখিদের ঠিকভাবে খাবার দেওয়া হয় না, দেখভালেরও অভাব রয়েছে। এটা অমানবিক ও হৃদয়বিদারক। চিড়িয়াখানার সম্পূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন।”
তিনি দেশের ভেটেরিনারি ক্লিনিকগুলোর আধুনিকায়নের তাগিদ দিয়ে বলেন, “অনেক ক্লিনিকই কার্যকারিতা হারিয়েছে। এগুলোকে প্রকৃত সহায়তা কেন্দ্রে রূপান্তর করতে হবে, যাতে কৃষক ও খামারিরা বাস্তবিক সহযোগিতা পান।”
বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, এবং সংশ্লিষ্ট সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।