গ্রেগরি চেন
Scaling Graduation Globally
যেখানে সরকার পরিচালিত গ্র্যাজুয়েশন কর্মসূচিগুলো ঐতিহাসিকভাবে গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে কেন্দ্রীভূত ছিল, সেখানে এখন নতুন একটি শহরভিত্তিক কর্মসূচির তরঙ্গ উদিত হচ্ছে, যা ক্রমবর্ধমান শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে কাজ করছে। শহরভিত্তিক গ্র্যাজুয়েশন কর্মসূচিগুলো গ্রামে সরকারের সফল উদ্যোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠলেও, এগুলোকে ভিন্ন অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বসবাস এবং অবকাঠামোগত বৈচিত্র্যের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে দুটি আশাব্যঞ্জক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য: ভারতের বিহার রাজ্যের বেশ কয়েকটি শহরে একটি নতুন উদ্যোগ এবং ইথিওপিয়ায় একটি জাতীয় শহরভিত্তিক কর্মসূচি।
ভারতের সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্যগুলোর একটি বিহার ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তাদের প্রথম শহরভিত্তিক গ্র্যাজুয়েশন কর্মসূচি চালু করে, যা গ্রামীণ Satat Jeevikoparjan Yojana (SJY) কর্মসূচির সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়। নতুন এই প্রোটোটাইপ শহুরে কর্মসূচিতে গয়া ও পাটনা শহরে ৩,৭৩১ জন অংশগ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কর্মসূচিতে রয়েছে ৮৬ জন কোচ, যারা নিয়মিত সরাসরি সহায়তা প্রদান করেন। এর সঙ্গে রয়েছে নগদ সহায়তা, খাদ্য নিরাপত্তা সংযোগ, পেনশন ও জীবনবিমা সুবিধা। এই কোচিং ও মৌলিক চাহিদা পূরণের সহায়তার পাশাপাশি, একটি “বিগ পুশ” লাইভলিহুড অ্যাসেট ট্রান্সফার দেওয়া হয় যাতে শহুরে মানুষরা নতুন জীবিকা শুরু করতে পারে—অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোটখাটো খুচরা দোকান ঘিরে। জীবিকার ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ভেজিটেবল ভেন্ডিং, মুদি দোকান, খাবারের স্টল, মাছ বিক্রি ও প্রসাধনী বিক্রি।
ইথিওপিয়ায়, Urban Productive Safety Net and Jobs Project (UPSNJP) ২০১৬ সালে চালু হয়। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ, এটি দেশব্যাপী বিভিন্ন শহরে ১,৫০,০০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর জীবিকায় বিনিয়োগ করেছে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রথম ধাপে রয়েছে “ক্যাশ ফর ওয়ার্ক” ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে তারা দ্রুত আয় শুরু করতে পারে এবং মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে—যা গ্র্যাজুয়েশনের মূল উপাদানগুলোর একটি। এই পাবলিক ওয়ার্কস ব্যবস্থা টার্গেটিংয়েও সহায়তা করে, কারণ যারা সবচেয়ে বেশি আয় দরকার তাদেরকেই সাধারণত কঠিন পরিশ্রমের কাজগুলো করতে দেখা যায়। এরপর অংশগ্রহণকারীদের গ্রুপ ভিত্তিক জীবনদক্ষতা ও উদ্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার পর রয়েছে প্রায় ৬০০ মার্কিন ডলার সমমূল্যের “বিগ পুশ” সহায়তা, যাতে তারা নতুন উদ্যোগ শুরু করতে পারে। বিশ্বব্যাংক ২০২১ সালে ইথিওপিয়ার এই শহরভিত্তিক কর্মসূচির মূল্যায়ন করেছিল।
শহরভিত্তিক গ্র্যাজুয়েশন কর্মসূচিগুলো সরকারের এই স্বীকৃতিকে তুলে ধরে যে, শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীরও প্রয়োজন এবং সামর্থ্য রয়েছে উৎপাদনশীল জীবিকা গড়ে তোলার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, শহরে সরকারের সুবিধা গ্রামে অপেক্ষা বেশি। কারণ শহর এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, বাসস্থান ও অন্যান্য সেবার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলকভাবে বেশি। শহরে সড়কপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থান নির্ধারণের মতো জীবিকার ওপরেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকে। তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বিতভাবে এই কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।
ইথিওপিয়ায় শহুরে জীবিকায় সরকারী সহায়তার একটি ইতিবাচক উদাহরণ হলো—গ্র্যাজুয়েশন অংশগ্রহণকারীদের উদ্যোগগুলো বিকশিত করার জন্য সরকারী সম্পদ সরবরাহ। আদ্দিস আবাবায় সরকার বৃহৎ সরকারি ভবনের ভেতরে কাজের জায়গা প্রদান করছে এবং বিদ্যুৎ, পানি, এমনকি পরিবহন সুবিধাও সরবরাহ করছে। এই শক্তিশালী সহায়তা অংশগ্রহণকারীদের ইঞ্জেরা (ইথিওপিয়ার প্রধান খাদ্য) উৎপাদন ও টেইলরিং ব্যবসার মতো উদ্যোগ পরিচালনায় সক্ষম করে তুলছে, যেখানে একাধিক ব্যক্তিও কাজ করছেন। এ ধরনের উদ্যোগ অংশগ্রহণকারীদের ব্যবসায়িক ব্যয় কমিয়ে এবং পরিবহন সমস্যার সমাধান করে ব্যবসা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তবে শহরে জীবিকায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন সমস্যাও দেখা দেয়। শহরের সরকারগুলো প্রায়শই অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের চাপে থাকে এবং শহর পরিকল্পনার সঙ্গে ব্যক্তির স্থায়ী বসবাসের সমন্বয় রাখতে হয়। গ্র্যাজুয়েশন একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, যেখানে সরকার নির্দিষ্ট অঞ্চল ও পরিবারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে শহরে বসবাসের জন্য উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলে। তবে একই সঙ্গে সরকারগুলো সচেতন থাকে, যাতে গ্র্যাজুয়েশন সহায়তা অত্যধিক না হয় এবং শহরে নতুন মানুষকে আকৃষ্ট করে ফেলায় না যা পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে, শহুরে গ্র্যাজুয়েশন একটি উদীয়মান হাতিয়ার—যা মানুষে বিনিয়োগ করে এবং একটি আরও বাসযোগ্য শহর নির্মাণে অবদান রাখে।