
ফেনী, ৩০ জুলাই — বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ উত্তাল, তখন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ফেনী শহরেও। আন্দোলনের ঢেউ শহর ছাড়িয়ে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহল। আন্দোলনের তীব্রতা এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপটে ৩০ জুলাই থেকে ফেনী শহরে পাহারা বসায় আওয়ামী লীগ, যাতে শহরজুড়ে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে জেলার প্রবীণ সাংবাদিক মামুনুর রশীদ বাসসকে বলেন, “ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন একপর্যায়ে সরকারবিরোধী এক দফার দুর্বার আন্দোলনে রূপ নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারদলীয় ক্যাডাররা শহরে মহড়া দিতে শুরু করে।”
ফেনী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ও দাগনভূঞার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন ফাহিম জানান, “১৭ জুলাই থেকে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেই। সেদিন মহিপালে স্কুল ও কলেজ ইউনিফর্মধারী শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। হুমকি-ধামকির কারণে দাগনভূঞায় কর্মসূচি করা সম্ভব হয়নি, তবে জেলা শহরে গিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতাম।”
তিনি আরও বলেন, “৩ আগস্ট আমরা দাগনভূঞা থেকে ফেনীর দিকে রওনা হই। পথিমধ্যে পাঁচগাছিয়া, তেমুহনী থেকে আরও অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন।”
আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক গাজী সালাহউদ্দিন আমান জানান, “আমরা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সমন্বয় করতাম। আমার গ্রুপে প্রায় ২০০ জন ছিল, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০-৮০ জন নিয়মিত কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে গ্রামের শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচিতে অংশ নিতো।”
দাগনভূঞার আবু সাঈদ ভূঞা অনি বলেন, “আমি আন্দোলনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলাম। ১৭ জুলাইয়ের কর্মসূচির পর থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ আমাকে নজরে রাখে। ৩০ জুলাই আওয়ামী লীগ শহরে পাহারা বসালে আমি সাবধান হয়ে যাই, কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে আসিনি।”
জেলা পর্যায়ের সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, “ছাত্রদের আন্দোলন দমনে যত বেশি দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, আন্দোলন ততই বিস্তৃত ও শক্তিশালী হয়েছে। জুলাইয়ের শেষ দিকে ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়।”