বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে কুমিল্লা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। দমন-পীড়ন, ছাত্রাবাসে হামলা, গ্রেপ্তার ও লাগাতার মামলা সত্ত্বেও এখানকার ছাত্রসমাজ আবারও সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথে ফিরে এসেছে।
২৮ জুলাই রাতে, কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের—বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ভিক্টোরিয়া কলেজের—শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গোপনে যোগাযোগ ও কর্মপরিকল্পনা গড়ে তোলে। প্রশাসনের নজরদারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর ও রাজনৈতিক সংগঠনের হুমকি সত্ত্বেও তারা নির্ধারণ করে, ২৯ জুলাই সকলে একযোগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেবে।
২৯ জুলাই সকাল থেকেই কুমিল্লার অলিগলি, ক্যাম্পাস ও শহরের দেয়ালজুড়ে দেখা যায় প্রতিবাদী স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ও নতুন জাগরণের চিত্র। বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হলেও এই প্রতিবাদ ছিল এক ঐক্যবদ্ধ সুর—বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের জবাব।
বিশেষ করে যখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে হুমকি ও জিজ্ঞাসাবাদের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই অপমানের প্রতিবাদে তারা রাজপথে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুবি শাখার সমন্বয়ক হাসান অন্তর বলেন: “দমন-পীড়ন আমাদের বিচ্ছিন্ন করেছিল, কিন্তু থামাতে পারেনি। ২৮ জুলাই রাতে আমরা সংগঠিত হই, আর ২৯ জুলাই আমরা রাজপথে ফিরি। মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়কে আমরা উপেক্ষা করেছি।”
কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন জানান: “পুলিশ ও ছাত্রলীগ মিলে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তুলে নিলেও আমরা থামিনি। আমরা প্রমাণ করেছি, কুমিল্লা থেকেই প্রতিরোধের বার্তা যাবে। ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা বারবার ফিরে আসব।”
কুমিল্লা সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল মন্তব্য করেন: “এই আন্দোলন কেবল সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রজন্মের প্রতিবাদ।”
সাবেক ছাত্রনেতা ও আইনজীবী বদিউল আলম সুজন বলেন: “যদি আমরা এই চেতনা টিকিয়ে রাখতে পারি, শহীদেরা আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কুমিল্লার রাজপথের এই পদচারণা একদিন ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
জুলাইয়ের এই গণজাগরণ এখন আর শুধু একটি আন্দোলনের নাম নয়—এটি হয়ে উঠেছে প্রতিরোধ, সংহতি, আত্মত্যাগ এবং ভবিষ্যতের নতুন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি।
২৯ জুলাইয়ের বিক্ষোভ ছিল কেবল একটি কর্মসূচি নয়—এটি ছিল আত্মার পুনর্জন্ম। বিচ্ছিন্ন ছাত্রসমাজের ঐক্য এবং প্রতিবাদ নতুন করে জাতিকে উদ্দীপনা ও আশার আলো দেখিয়েছে।