![]()
ই-বাংলাদেশ ডেস্ক
কৃষি মন্ত্রণালয় (MoA), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং গেটস ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে “কৃষি খাতে টেকসই ও সহনশীল বিনিয়োগের জন্য কারিগরি সহায়তা: কৃষি খাত রূপান্তর কর্মসূচি (AsTP)” প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক সূচনা কর্মশালায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
AsTP প্রকল্পটি বাংলাদেশের কৃষি খাতকে আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি টেকসইতা, সহনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি খাতের রূপান্তর সাধনে সহায়তা করবে, বিশেষ করে স্থানীয় ও বৈশ্বিক পরিবর্তনশীল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রেক্ষাপটে। প্রকল্পটি সরকারের সামগ্রিক কৃষি রূপান্তর কর্মসূচির (ATP) একটি অংশ, যা প্রমাণভিত্তিক পরিকল্পনা, আঞ্চলিক বিনিয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ERD) কর্তৃক অনুমোদিত এবং এপ্রিল ২০২৫-এ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (ECNEC) কর্তৃক অনুমোদিত এই প্রকল্পটি FAO দ্বারা বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC) প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। প্রকল্পের অন্যান্য অংশীদার সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (DAE), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)। প্রকল্পটি জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ ও বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর মতো প্রধান নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন FAO সদর দপ্তরের সাউথ-সাউথ ও ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা বিভাগের পরিচালক আনপিং ইয়ে, গেটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সিদ্ধার্থ চতুর্বেদী, এবং FAO বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি। কর্মশালাটি সভাপতিত্ব করেন BARC-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম। সরকারি, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি, শিক্ষাব্যবস্থা ও নাগরিক সমাজসহ ১৫০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী এতে অংশগ্রহণ করেন।
ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “AsTP প্রকল্পটি এমন একটি সময়ে শুরু হয়েছে যখন বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের প্রাক্কালে তার কৃষি অগ্রাধিকার পুনঃনির্ধারণ করছে। এই প্রকল্প আমাদের জাতীয় নীতি প্রমাণের সঙ্গে সংযুক্ত করতে, কৌশলগত বিনিয়োগ করতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।”
FAO সদর দপ্তরের পরিচালক আনপিং ইয়ে বলেন, “AsTP প্রকল্পটি দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার মূল চেতনার প্রতিফলন—যেখানে পারস্পরিক শিক্ষা, সহ-উদ্ভাবন এবং স্থানীয় বাস্তবতায় খাপ খাওয়ানো হয়েছে। এটা বৈশ্বিক জ্ঞানকে বাস্তব ও স্থায়ী প্রভাব তৈরিতে রূপান্তর করছে।”
FAO বাংলাদেশের প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি বলেন, “AsTP শুধু একটি অংশীদারিত্ব নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কৃষিকে রূপান্তর করার এক সাহসী পদক্ষেপ। সরকার, FAO এবং গেটস ফাউন্ডেশন একত্রে আজকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
প্রকল্পটি তিনটি আন্তঃসংযুক্ত উপাদানে বিভক্ত। প্রথমটি হলো প্রমাণভিত্তিক কৃষি পরিকল্পনা জোরদার করা, যার মাধ্যমে FAO’র Monitoring and Analysing Food and Agricultural Policies (MAFAP) ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে সরকারি ব্যয় অনুকূল করা ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সহায়তা করা হবে। দ্বিতীয় উপাদানে ছয়টি কৃষি-প্রকৃতিক অঞ্চল জুড়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সহনশীল আঞ্চলিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। তৃতীয় উপাদানে উদ্ভাবন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে—যেখানে IoT-ভিত্তিক প্রযুক্তি, Global GAP এর সাথে সামঞ্জস্য এবং ডিজিটাল কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপাশি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা থেকে বিশ্বজ্ঞানকে কাজে লাগানো হবে।
কর্মশালায় প্রকল্পের উপাদান ও লক্ষ্যসমূহ নিয়ে উপস্থাপনা ও একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রমাণ, বিনিয়োগ, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা কৃষি রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে সমন্বিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তথ্যভিত্তিক পদ্ধতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা, বিনিয়োগকে সক্রিয় করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে AsTP প্রকল্পটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের রূপান্তর ত্বরান্বিত করবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন লক্ষ্যে অবদান রাখবে। সরকার, FAO ও জাতীয় অংশীদারদের যৌথ প্রচেষ্টায়, এই প্রকল্প “ভাল উৎপাদন, ভাল পুষ্টি, ভাল পরিবেশ ও সবার জন্য ভাল জীবন” বাস্তবায়নের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ।