স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ ৭০ জনকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ও উদ্ধার তৎপরতা
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের কিছু সময় পরই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলেজ চত্বরে আছড়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, বিজিবির ২ প্লাটুন এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন।
১টা ২২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
বিমানটির ধরণ ও পাইলটের মিশন
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই মডেলের একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এটি ছিল ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট তৌকির ইসলাম সাগরের প্রথম একক ফ্লাইট (সোলো মিশন)।
একজন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা জানান, উড্ডয়নের পরপরই বিমানে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার পর তাকে ইজেক্ট করতে বলা হলেও খুব নিচু দিয়ে উড়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, তৌকির চেষ্টা করেছিলেন বিমানটি দিয়াবাড়ির ফাঁকা স্থানে নামানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। বিমানটি বাউন্স করে মাইলস্টোন স্কুলের একটি অ্যাকাডেমিক ভবনের গেটে আছড়ে পড়ে।
তৌকির ইসলাম সাগরকে আহত অবস্থায় সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মানবিক ট্র্যাজেডি: শিক্ষার্থীরা দগ্ধ, পরিবারের আহাজারি
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় স্কুলে ক্লাস চলছিল। দগ্ধদের মধ্যে ছিলেন মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরে জান্নাত উষা। তাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা ইয়াসমিন আক্তার ছেলের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“আমার মেয়ের সব পুড়ে গেছে, তোমরা কেউ তার জ্বালা বন্ধ করো। আমি তার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।”
তার ভাই তাহমিন ইসলাম রোহান বলেন,
“প্রতিদিনের মতো আজও বোনকে নিতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে খুঁজে তাকে বের করি, তখনই দেখি শরীর পুড়ে গেছে।”
আহতদের জন্য মেট্রোরেলের বিশেষ ব্যবস্থা
পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহতদের দ্রুত পরিবহনের জন্য মেট্রোরেলের একটি বগি রিজার্ভ রাখা হয়েছে। নারী বগির পাশের দ্বিতীয় বগিটি আহতদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘোষণা
জাতীয় বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে এসে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান,
“আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে এবং যারা গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, তাদের বিদেশেও পাঠানো হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আজকের দিনটি জাতির জন্য বড় ট্র্যাজেডি। রাষ্ট্র শোকাহত।”
জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা ও তদন্ত ঘোষণা
সরকার থেকে আগামীকাল জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।