ই-বাংলাদেশ ডেস্ক
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘিরে সম্প্রতি ‘পুশ ইন’ ইস্যু নিয়ে বিতর্ক এবং উত্তেজনা আবারো শিরোনামে। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সীমান্ত রাজ্যগুলো থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কড়া অবস্থান—উভয়ই দক্ষিণ এশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিতে ফেলছে।
তবে এবার পরিস্থিতির নতুন দিক হলো—এই অনুপ্রবেশ বা পুশ ইন বাস্তবতায় ভারতের নিজের অর্থনীতিও বিপদে পড়তে পারে।
সীমান্ত অর্থনীতি: কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উভয় দেশ?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই নানা অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্র। বৈধ সীমান্ত বাণিজ্যের পাশাপাশি একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে অবৈধ পণ্য প্রবাহ, গবাদি পশু চোরাচালান এবং শ্রমিক ‘পুশ ইন’।
ভারত যদি এসব অনুপ্রবেশকারীকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে তা বাংলাদেশে সামাজিক চাপ তৈরি করলেও ভারতের অভ্যন্তরে তৈরি হবে শ্রম ও প্রান্তিক অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা। কারণ বহু সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবৈধ অভিবাসীরা শ্রমজীবী অর্থনীতির অংশ হয়ে উঠেছে। এদের সরিয়ে দিলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।
উল্টো চাপ ভারতের ওপর কেন?
১. শ্রমিক সংকট: ভারতের গ্রামীণ কৃষি ও নির্মাণ খাতে অনেক সময়েই বাংলাদেশি অভিবাসীরা শ্রম দিয়ে থাকেন। পুশ ইন কার্যক্রমে শ্রম ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
২. সীমান্ত অস্থিরতা = বিনিয়োগ ঝুঁকি: সীমান্তে অশান্তি বাড়লে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে পড়তে পারে।
৩. রাজনৈতিক সংকট ও আঞ্চলিক সম্পর্ক: ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জনমনে নেতিবাচক মনোভাব বাড়তে পারে, যার ফলে বাণিজ্য, যোগাযোগ, ট্রানজিট সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৪. সামাজিক অসন্তোষ: ভারতের কিছু রাজ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি পুশ ইনকে ‘দেশরক্ষার’ কৌশল হিসেবে দেখালেও, এর বাস্তবিক ফলাফল হতে পারে অভ্যন্তরীণ সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও আন্তর্জাতিক নিন্দা।
বাংলাদেশের অবস্থান: প্রতিরোধ এবং কৌশল
বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত নেবে না। এমনকি সীমান্তে ‘অমানবিক আচরণ’ প্রতিহত করতে কঠোর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যদি মানবিক, কূটনৈতিক ও প্রমাণভিত্তিকভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক মহলে সমর্থন পেতে পারে। একইসাথে আঞ্চলিক ব্যবসায় অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে পারে।
সীমানা নয়, সহযাত্রাই টেকসই অর্থনীতির চাবিকাঠি
দুই দেশের মাঝে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক যোগাযোগ (BBIN, BIMSTEC), এবং বেসরকারি বিনিয়োগের যে প্রবাহ চলছে, তাতে সীমান্তে উত্তেজনা দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই হুমকি। ‘পুশ ইন’ কৌশল ভারতের জন্য আপাত দৃষ্টিতে জাতীয়তাবাদী অবস্থান দেখালেও, এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক স্ববিরোধিতা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজন ঠাণ্ডা মাথায় কৌশলী কূটনীতি, তথ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রচার এবং সীমান্ত অর্থনীতিকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা। তবেই আসবে সঠিক সমাধান।