• হোম > এশিয়া | বাংলাদেশ | বিদেশ | রাজনীতি > দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব: চীন, পাকিস্তান ও তুরস্কের সঙ্গে নতুন মৈত্রী

দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব: চীন, পাকিস্তান ও তুরস্কের সঙ্গে নতুন মৈত্রী

  • শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৯
  • ১১৫

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বিশেষ প্রতিনিধি

চাতম হাউসে এই সপ্তাহে ঢাকায় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস–এর এক বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিতে ‘সবাইকে কাছে আনার’ চেষ্টা চলছে।

তবে এই বার্তা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তবে একটা স্পষ্ট নীতি পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে––যা পূর্ববর্তী সরকার শেখ হাসিনার ভারত-কেন্দ্রিক নীতি থেকে একটি দূরত্ব তৈরি করে এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃসংজ্ঞায়িত হচ্ছে ।

ইউনূস তার নীতি গত মার্চে চীনে নিয়মিত এক প্রথম বড় রাজনীতিক সফরে তুলে ধরেন। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং–এর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং রোবোটিক্স, সাংস্কৃতিক বিনিময়, সামরিক প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর ওপর বড় প্রকল্পে চুক্তি সম্পাদন ও চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–এর অগ্রগতি শেখার আগ্রহ ব্যক্ত করেন ।

চীন ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দান করেছে এবং কিছু হালকা শিল্প নিজ শিল্প এলাকা বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । সেইসাথে, সংস্কৃতিক ফাঁকেও এক নজির গড়ে, বাংলা নববর্ষে ঢাকায় ২,৬০০ ড্রোনের আলো প্রদর্শন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি চিহ্নিত করে ।

আঞ্চলিক সম্পর্কের বড় পরিবর্তন

যদিও শেখ হাসিনার সময়েও চীনের রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে, তবে নিরাপত্তা এবং সামরিক দিক থেকে ভারতের সঙ্গে ঘন বন্ধন ছিল দৃঢ়। তাঁরা একাধিক যৌথ সামরিক মহড়া ও গোয়েন্দা সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করেছেন ।

বর্তমানে ইউনূস প্রশাসন এই কাঠামো ভেঙে ফেলছে: ডিসেম্বর ২০২৪–এ ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহবাজ শরীফ–এর সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’দেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্র পথ ও আমদানিতে সহজীকরণ এবং সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ চীনা জাহাজের সঙ্গে পাকিস্তানের AMAN25 সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নেয় ।

সংবাদ রয়েছে যে ইউনূস সরকার চীনের J10 এবং JF17 যুদ্ধবিমান কেনার কথা ভাবছে—যেখানে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী এই বিমানের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে । যদিও তিনি এপ্রিলে কাশ্মীরের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেন, তবে সীমান্তবর্তী এই উন্নত যৌথ সামরিক সহযোগিতা নতুন উত্তেজনা আনতে পারে ।

ইউনূস তুরস্কের সঙ্গে সামরিক উৎপাদন ক্ষেত্রেও সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছেন, যাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য তুর্কি অস্ত্র রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে ।

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যত পরীক্ষা

ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কে ফাটল দেখা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ভারতের শেখ হাসিনা–কে সমর্থন দেয়ার ফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষায় বাধা সৃষ্টি হয়েছিল—এতে যাত্রী হয়ে উঠেছে এক ধরনের হতাশা ও অসন্তোষ । ভারতের রপ্তানকৃত ৭ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন ঋণও ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল ।

তাছাড়া, ২০২৪ সালের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবে ভারতের মিথ্যা তথ্যচিত্র ‘ইসলামী বন্ডোবস্ত’ হিসেবে তুলে ধরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল—যা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ভারতের ধারনা বিকৃত করেছিল ।

এর পুরো কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত চিত্র আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিল নির্বাচনের ও ভারতের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি এখন ভারত-মুখী থেকে বিচ্যুত হয়ে চীন, পাকিস্তান ও তুরস্কের দিকে ঘুরেছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার বৈশ্বিক ঘনত্বের মানচিত্রে একটি সুস্পষ্ট ভূ‑রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3173 ,   Print Date & Time: Friday, 10 October 2025, 10:45:56 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh