• হোম > এন্টারপ্রেনার | এস এম ই | ওমেন এন্টারপ্রেনার | বাংলাদেশ | স্টার্ট আপ > স্থবির বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিভাবে উদ্যোক্তারা প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হতে পারে

স্থবির বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিভাবে উদ্যোক্তারা প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হতে পারে

  • শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০০:১৮
  • ১২০

তুলাতুলিতে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি সেবা  FAO ও E-Farmer Bangladesh-এর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারের তুলাতুলি ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টারে এক নারী উদ্যোক্তা সৌরবিদ্যুৎ চালিত কৃষি সেবা পরিচালনা করছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট
বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দা, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং অনিশ্চয়তায় জর্জরিত, তখন একটিমাত্র শক্তিই দৃঢ়ভাবে পরিবর্তনের বার্তা বহন করছে—উদ্যোক্তা-চেতনা বা উদ্যোগ। আজকের এই ঝুঁকিপূর্ণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে পিছিয়ে যাচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের হার কমছে, সেখানে উদ্যোক্তারাই হয়ে উঠছেন অর্থনৈতিক নবজাগরণের প্রধান চালিকাশক্তি—বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ক্ষেত্রে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে বিশ্ব এক “পলিক্রাইসিস” বা বহুমুখী সংকটের মুখোমুখি—মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত বিভ্রান্তি এর অংশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (WEF) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩% এর নিচে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম এক বিশেষ শক্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে। ঝুঁকি নেওয়ার সাহস, লক্ষ্যভিত্তিক উদ্ভাবন, এবং স্থানীয় সহায়ক পরিবেশ তাদের এই দৃঢ়তার পেছনের মূল কারণ।

কেন উদ্যোক্তারা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

১. ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা

স্থবির অর্থনীতিতে উদ্যোক্তারাই সেই সাহসী পথিক, যারা অনিশ্চয়তার মাঝেও নতুন আইডিয়া নিয়ে মাঠে নামেন। জলবায়ু সহনশীল কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতির ডিজিটাল সমাধান কিংবা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোতে নতুন উদ্যোগগুলোই অর্থনীতিকে গতি এনে দেয়।

২. উদ্দেশ্যনির্ভর উদ্ভাবন

আধুনিক উদ্যোক্তারা কেবল লাভ নয়, সমাজের সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধান খুঁজে বেড়ান। যার ফলে তারা তরুণদের আকৃষ্ট করছেন, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ পাচ্ছেন এবং সমস্যাভিত্তিক পণ্যের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছেন।

৩. স্থানীয় সমস্যার বৈশ্বিক সমাধান

বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—ই-ফার্মারস বাংলাদেশ লিমিটেড-এর কথা, যারা কৃষিকে ডিজিটালাইজ করে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ও ‘ইয়ার্ড ইকোনমি’-র মাধ্যমে গ্রামীণ জীবিকা রূপান্তর করছে। এটি শুধু কৃষকের আয় বাড়াচ্ছে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নারী ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথও তৈরি করছে।

বাংলাদেশ: এক উদীয়মান সাহসিকতার গল্প

বাংলাদেশ নানা সংকটের মাঝেও তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, যার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী উদ্যোক্তা সংস্কৃতি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের মতে, ডিজিটাল সংযোগ, যুবদের অংশগ্রহণ ও সরকারি নানা উদ্যোগের মাধ্যমে গড়ে ওঠা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

টেকনোলজি নির্ভর মৎস্য খাত থেকে শুরু করে রিসাইকেলিং শিল্প—প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও নতুন উদ্যোগ গড়ে উঠছে, যা দেশজ সমস্যার টেকসই সমাধান দিচ্ছে।

একটি সহায়ক পরিবেশের গুরুত্ব

উদ্যোক্তারা যেন আরও এগিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজন একটি সহায়ক পরিবেশ, যার মধ্যে রয়েছে:

অর্থায়ন প্রাপ্তির সুযোগ (গ্র্যান্ট, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড)

মেন্টরশিপ ও ইনকিউবেশন সাপোর্ট

ডিজিটাল অবকাঠামো ও বাজারে প্রবেশাধিকার

উদ্যোক্তা বান্ধব নীতিমালা ও রেগুলেশন

যেমন—IFAD-এর Agri Connect Program কিংবা P4G Initiative উদ্যোক্তাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে একত্রিত করে কাজ করছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ নানা উন্নয়নশীল দেশ উপকৃত হচ্ছে।

সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা

বিশ্ব যদি এই স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন গতি পেতে চায়, তাহলে উদ্যোক্তাদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। কেবল সিলিকন ভ্যালিতে নয়—ঢাকা, মান্দা, কক্সবাজার কিংবা রংপুর-এও উদ্যোগের আলো ছড়াতে হবে।

বাংলাদেশের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক সুযোগ: উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ দিন, টুলস ও প্রশিক্ষণে শক্তিশালী করুন, এবং স্কেল করার পথে বাঁধা সরান। ইতিহাস বলে, প্রতিটি শিল্পবিপ্লবের নেপথ্যে ছিল উদ্যোক্তাদের সাহস ও উদ্ভাবন। আজও অর্থনৈতিক উত্তরণের সবচেয়ে বড় ভরসা তারাই।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3158 ,   Print Date & Time: Friday, 10 October 2025, 09:14:27 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh