• হোম > অর্থনীতি | এক্সক্লুসিভ | এশিয়া | বাংলাদেশ > ভারতের কড়া নজরদারি: বাংলাদেশি পাট রপ্তানি রিরাউট ঠেকাতে নতুন পদক্ষেপ

ভারতের কড়া নজরদারি: বাংলাদেশি পাট রপ্তানি রিরাউট ঠেকাতে নতুন পদক্ষেপ

  • বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ১৭:২৭
  • ১১৬

ভারতের Nhava Sheva বন্দর

ই-বাংলাদেশ বিশেষ প্রতিবেদক

ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি আরোপ করছে। এবার তাদের লক্ষ্য, তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে ‘রিরাউটিং’ বা বিকল্প পথে পণ্য প্রবেশ বন্ধ করা। ফলে বাংলাদেশের পাট শিল্প, যা ইতোমধ্যেই নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত, নতুন এক সংকটে পড়েছে।

বিস্তারিত প্রতিবেদন:
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমন এক নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি শুধুমাত্র Nhava Sheva পোর্ট দিয়ে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রিরাউটিং ঠেকানোই মূল উদ্দেশ্য। আগে ভারতীয় শুল্ক বিভাগ লক্ষ করেছে যে, কিছু বাংলাদেশি রপ্তানিকারক তাদের পণ্য তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করিয়ে নিচ্ছেন, যাতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক এড়ানো যায়।
ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এইভাবে “অবৈধ রপ্তানি রুট” ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ ভারতীয় বাজারকে প্রতিযোগিতায় ফেলছে এবং স্থানীয় পাট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমন একটি নির্দেশনা জারি করেছে, যার আওতায় বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখন শুধুমাত্র Nhava Sheva বন্দরে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের বিকল্প বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভারতে পণ্য পাঠানোর সুযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগকে ‘রিরাউটিং প্রতিরোধ’ নীতির একটি কৌশলগত অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রিরাউটিং কীভাবে ঘটে?
‘রিরাউটিং’ বলতে বোঝায় — মূলত একটি দেশ থেকে রপ্তানি করা পণ্যকে তৃতীয় একটি দেশের মাধ্যমে ঘুরিয়ে লক্ষ্যবস্তু দেশ (এই ক্ষেত্রে ভারত) প্রবেশ করানো। এতে দেশটি সরাসরি শুল্ক আরোপ করতে পারে না বা করের হার কমে যায়, কারণ কাগজে পণ্যটি সেই তৃতীয় দেশের রপ্তানি বলে গণ্য হয়।
ভারতীয় কাস্টমস এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ট্রেড রেমেডিজ (DGTR) দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করছিল যে, বাংলাদেশের কিছু রপ্তানিকারক সংস্থা নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), বা শ্রীলঙ্কার মাধ্যমে পাটপণ্য ভারতে পাঠিয়ে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক এড়ানোর চেষ্টা করছে। এই ঘটনাকে তারা “misuse of country-of-origin rules” বলে অভিহিত করেছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া: স্থানীয় শিল্পের রক্ষা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ
ভারতের দাবি অনুযায়ী, এই ধরণের রিরাউটিংয়ের ফলে স্থানীয় পাটকল শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশি পণ্যের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় সেগুলো ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করলে দেশীয় উৎপাদকরা মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না।
এ প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার কেবলমাত্র Nhava Sheva বন্দরে রপ্তানি সীমিত করার মাধ্যমে সরবরাহ চেইনে নজরদারি জোরদার করছে। এতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এক কেন্দ্রীয় জায়গা থেকেই পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করতে পারবে।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য:
একজন উচ্চপদস্থ ভারতীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলেও দেশের স্বার্থে বাজার সুরক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। বাংলাদেশি পণ্যের রিরাউটিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ স্থানীয় শিল্পের জন্য হুমকি।”
আঞ্চলিক বাণিজ্য নীতিতে প্রভাব
এই সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সম্প্রতি চীনের সঙ্গে নানা বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত অংশীদারত্বে জড়িয়েছে। ভারতের দৃষ্টিতে এসব পদক্ষেপ আঞ্চলিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে, যা তাদের বাণিজ্য নীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের পাট রপ্তানিতে প্রভাব
বাংলাদেশের পাট শিল্প বহু বছর ধরেই নানা সংকটে রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যেখানে আগের অর্থবছরে তা ছিল ৮৫৫ মিলিয়ন।
নতুন করে ভারতের কড়াকড়ি আরোপ এই খাতের জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি বাজার ভারত হওয়ায়, এই নিষেধাজ্ঞা পাট উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভৌগলিক প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র বাণিজ্যিক নয়, বরং কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার সুরক্ষার উদ্যোগ — এই দুই বিষয়ই এই পদক্ষেপের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত
বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (BJMC) এক কর্মকর্তা বলেন:
“ভারত আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করলেও আমাদের উচিত নতুন বাজার খোঁজা এবং ইউরোপ-আফ্রিকার জৈব ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা কাজে লাগানো।”
ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাট খাতের জন্য এক কঠিন বার্তা। তবে এই চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের পথও আছে — তা হল পণ্য বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার সৃষ্টি, এবং ট্রেসেবল ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করা।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3128 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 03:44:15 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh