• হোম > অর্থনীতি | আফ্রিকা | ইউরোপ | উত্তর আমেরিকা | এশিয়া | দক্ষিণ আমেরিকা | বাংলাদেশ | বিদেশ | মধ্যপ্রাচ্য > বিশ্বব্যাংকের আয়ের শ্রেণিবিন্যাস (FY26): উন্নয়ন পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের কৌশলগত বিবেচনা

বিশ্বব্যাংকের আয়ের শ্রেণিবিন্যাস (FY26): উন্নয়ন পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের কৌশলগত বিবেচনা

  • শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫৯
  • ৮৩

“বিশ্বব্যাংকের FY26 আয়ের শ্রেণিবিন্যাসে বাংলাদেশের অগ্রগতি চিত্রিত

ই-বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রতিবছর জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংক গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ডেটাবেইস ব্যবহার করে দেশগুলোকে চারটি আয়ের স্তরে শ্রেণিবিন্যস্ত করে: নিম্ন‑আয়, নিম্ন-মধ্য‑আয়, উপর-মধ্য‑আয়, এবং উচ্চ‑আয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের (FY26) নতুন শ্রেণিবিন্যাস বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—বিশ্ব অর্থনীতি ধীরে হলেও উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তবে এর গতি ও প্যাটার্ন বৈচিত্র্যময়।

নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের জন্য এটি কেবল তথ্য নয়; এটি কৌশল পুনর্গঠনের জন্য একটি সংকেত, যেখান থেকে সামাজিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস এবং বৈদেশিক অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা যায়।

শ্রেণিবিন্যাসের অর্থনীতি: মৌলিক কাঠামো
বিশ্বব্যাংকের এই শ্রেণিবিন্যাস তৈরি হয় Atlas পদ্ধতির মাধ্যমে হিসাব করা GNI per capita-এর উপর ভিত্তি করে, যেখানে তিন বছরের গড় বিনিময় হার, স্থানীয় মুদ্রার মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম বিবেচনা করা হয়। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত মুদ্রাজনিত বিকৃতি হ্রাস করে উন্নয়ন প্রবণতা বিশ্লেষণ সহজ হয়।

FY26-এ শ্রেণিগুলোর সীমা:
নিম্ন-আয়: ≤ $1,135

নিম্ন-মধ্য-আয়: $1,136 – $4,465

উপর-মধ্য-আয়: $4,466 – $13,845

উচ্চ-আয়: ≥ $13,846

এই সীমানাগুলো প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF SDR deflator) পরিবর্তনের ভিত্তিতে সামঞ্জস্য করা হয়। অর্থাৎ, শ্রেণির গণ্ডি ঠিক থাকার পরেও একটি দেশের অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মূল্যের তারতম্যের কারণে।

কেন এই শ্রেণিবিন্যাস গুরুত্বপূর্ণ?
১. আর্থিক সহায়তার প্রবেশদ্বার
এই শ্রেণিবিন্যাস অনেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার জন্য অর্থায়নের নীতিনির্ধারণে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয় (যেমন: IDA, IBRD)। নিম্ন বা নিম্ন-মধ্য‑আয়ের দেশগুলো IDA concessional financing-এর সুবিধা পায়, যেখানে উচ্চ-আয়ের দেশগুলো বাজারভিত্তিক শর্তে ঋণ পায়।

২. নীতিনির্ধারণে সহায়ক
সরকারি বাজেট, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: উচ্চ‑আয়ে উন্নীত হওয়ার পথে থাকা দেশগুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হয়, কারণ ধনী-দারিদ্র্যের ব্যবধান প্রকট হয়ে উঠতে পারে।

৩. বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নীতি
উচ্চ আয়ের শ্রেণিতে উত্তরণের সম্ভাবনা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায়। এক্ষেত্রে গবেষকদের জন্য এটি একটি সূচক হয়ে দাঁড়ায় যে, কোন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাব্যতামূলক এবং কোন খাতে রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন।

FY26 এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও বিশ্লেষণ
এই অর্থবছরের শ্রেণিবিন্যাসে বেশ কিছু দেশ স্থান পরিবর্তন করেছে।

কোস্টা রিকা উচ্চ‑আয়ে উন্নীত হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মানসম্মত সামাজিক খাত বিনিয়োগ আয় বৃদ্ধি করতে পারে।

নামিবিয়া উপর-মধ্য‑আয় থেকে নিচে নেমে গেছে। এটিতে দুইটি বিষয় স্পষ্ট: প্রবৃদ্ধির মন্থরতা ও জনসংখ্যা অনুমানের হালনাগাদ।

বাংলাদেশের মতো দেশ এখনও নিম্ন-মধ্য‑আয়ে থাকলেও দ্রুত গতিতে উপর-মধ্য‑আয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি: পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স এবং কৃষি উৎপাদন। তবে গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অসমতা ও শহর-কেন্দ্রিক বিকেন্দ্রীকরণ সমস্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কৌশলগত নির্দেশনা

নীতিনির্ধারকদের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব:

উন্নয়নের বহুমুখীকরণ: GNI per capita বাড়ানোর জন্য শুধুমাত্র শ্রমনির্ভর খাত নয়, বরং প্রযুক্তি, কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং জ্ঞানভিত্তিক সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস: আয়ের শ্রেণিবিন্যাসের উন্নয়ন হলেও, দেশের ভেতরে আয় ও সুযোগের বৈষম্য স্থায়ী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। স্থানীয় সরকারগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

সামাজিক ব্যয়কে রক্ষণশীল না করে, ভবিষ্যতমুখী করা: স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু অভিযোজন খাতে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিই ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি।

ডেটা ও পরিসংখ্যান ব্যবস্থার আধুনিকায়ন: যেমন জনসংখ্যা ও প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান যত বাস্তবসম্মত হবে, তত উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকর হবে।

বিশ্বব্যাংকের আয়ের শ্রেণিবিন্যাস নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের জন্য শুধুমাত্র প্রতিবছরের এক সেট তথ্য নয়, বরং এটি একটি বিশ্লেষণাত্মক কাঠামো, যার উপর ভিত্তি করে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, আর্থিক সক্ষমতা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার রূপরেখা নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য এটি একটি আয়না, যা সামনে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3122 ,   Print Date & Time: Sunday, 6 July 2025, 06:19:58 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh