জাহিদ ইউ. সৈয়দ
“যেমনটি ChatGPT এআই জগতকে বদলে দিয়েছিল, তেমনই রোবোটিক্স জগতে ঘটে যাবে এক বিপ্লব”—বিনোদ খোসলা, খোসলা ভেঞ্চারস
প্রযুক্তির জগতে এক নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে রোবোটিক্স। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী বিনোদ খোসলা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই রোবোটিক্সে এমন এক যুগান্তকারী মুহূর্ত আসবে, যা ২০২২ সালে ChatGPT-র আবির্ভাবের সমতুল্য।”
রোবোটিক্সে কেমন হবে এই ‘মুহূর্ত’?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-র সঙ্গে রোবোটিক্স একীভূত হয়ে এমন এক যুগান্তকারী রোবট তৈরি করবে, যেগুলো শুধু প্রোগ্রাম করা নয়, বরং নিজেরা শিখে কাজ করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি রোবট রান্না করতে শিখতে পারবে শুধু পর্যবেক্ষণ বা ইন্টার্যাকশন থেকে, যেমন মানুষ শেখে।
এই রোবটগুলো হবে মানুষের মতো আকৃতির (হিউম্যানয়েড) এবং ঘরের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারযোগ্য। তারা বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা প্রোগ্রামিংয়ের উপর নির্ভর না করে, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন টাস্ক পারফর্ম করবে।
প্রযুক্তি ও অর্থনীতির সমীকরণ
খোসলার মতে, এর খরচ হবে মাসে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার — অনেকটাই একজন গৃহকর্মীর খরচের মতো। তিনি বলেছেন:
“মানুষের বাড়িতে যেমন গৃহকর্মী বা সহায়ক থাকে, ভবিষ্যতে তেমনি রোবট থাকবে।”
এটি শুধু উচ্চবিত্তদের নয়, মধ্যবিত্ত ঘরেও রোবটিক্সকে নিয়ে আসবে — কারণ এটি আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন হয়ে উঠবে।
বর্তমানে বাধাগুলো কী?
হার্ডওয়্যার চ্যালেঞ্জ: সফটওয়্যারের তুলনায় রোবোটিক্স অনেক বেশি জটিল। শরীরের নড়াচড়া, সেন্সর, ব্যাটারি লাইফ, ও স্থায়িত্ব—সবকিছুই নির্ভুল হতে হবে।
পরিবেশ পরিবর্তনের সমস্যা: চীনে নির্মিত অনেক হিউম্যানয়েড রোবট নির্দিষ্ট পরিবেশে কার্যকর হলেও, তারা নতুন পরিস্থিতিতে সহজে অভিযোজিত হতে পারে না।
লার্নিং ক্যাপাসিটি: বর্তমান বেশিরভাগ রোবট ‘হ্যান্ড কোডেড’। ভবিষ্যতের জন্য দরকার হবে এমন রোবট যা নিজে থেকে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে পারবে।
কারা নেতৃত্ব দেবে এই বিপ্লব?
> “প্রথাগত প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, স্টার্টআপরাই হবে এই বিপ্লবের পথিকৃৎ,” বলেন খোসলা।
তিনি মনে করেন OpenAI, Anthropic, Humane, Rabbit ইত্যাদি নতুন কোম্পানিগুলো যেভাবে AI-তে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তেমনি রোবোটিক্সে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো ঝড় তুলবে।
Nvidia ও Amazon-এর ভবিষ্যদ্বাণী
NVIDIA-র CEO জেনসেন হুয়াং বলেন, “শারীরিক AI-ই হবে পরবর্তী বড় ইন্ডাস্ট্রি। প্রথমে চালকবিহীন গাড়ি, এরপর ঘরোয়া রোবট।”
Amazon ইতিমধ্যে রোবোটিক্সে বিপুল বিনিয়োগ করছে। তাদের অ্যাস্ট্রো রোবট, ফ্যাক্টরি অটোমেশন এবং AI-চালিত স্মার্ট হোম সলিউশন রোবোটিক্সের বাজারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
২০৩০-এর লক্ষ্য: প্রতিটি ঘরে একটি রোবট
খোসলার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অনেক পরিবারেরই একটি করে ব্যক্তিগত রোবট থাকবে। যারা রান্না, পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, এমনকি শিশুদের দেখাশোনাও করতে পারবে।
উপসংহার
যেমন ChatGPT আমাদের যোগাযোগ, লেখালেখি ও চিন্তাধারায় বিপ্লব এনেছে, তেমনি একটি ‘রোবোটিক মুহূর্ত’ পুরো গৃহজীবন ও পেশাগত পরিবেশ বদলে দিতে পারে। এটি কেবল প্রযুক্তির বিষয় নয়; এটি মানব সমাজে শ্রম, দক্ষতা ও জীবনের সংজ্ঞা বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।