মামুন রশীদ
বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তি রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও আমাদের যাত্রা অনেক দেশের তুলনায় কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে, তবুও এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো ERP সিস্টেম, বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন, ক্লাউড প্রযুক্তি, এন্টারপ্রাইজ ডেটা প্ল্যাটফর্ম এবং বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারে অগ্রসর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে।
বাংলাদেশে টেলিকম সেক্টর অন্যতম প্রথম AI গ্রহণকারী খাত হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা অন্যান্য খাতকে অনুপ্রাণিত করছে। AI-এর কার্যকর ব্যবহার অপারেশনাল দক্ষতা, গ্রাহকসেবা এবং ব্যবসায়িক অপ্টিমাইজেশনে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এনে দিতে পারে। বিদ্যমান সিস্টেমে AI সংযুক্ত করে বাংলাদেশের ব্যবসাগুলো বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সুযোগ পাচ্ছে।
AI প্রযুক্তি ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রূপান্তরমূলক সুবিধা প্রদান করে। এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে, যার ফলে গ্রাহক সন্তুষ্টি ও আস্থার উন্নতি ঘটে। উন্নত প্রেডিকশন ও কম ত্রুটির মাধ্যমে AI মডেলগুলো বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে। পাশাপাশি এটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া সহজ করে, সময় সাশ্রয় করে এবং কর্মীদের অধিক মূল্য সংযোজন কাজে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে।
“ফার্ম টু ফ্যাক্টরি” মডেল ও কৃষিখাতে AI-এর ব্যবহার
বাংলাদেশে “ফার্ম টু ফ্যাক্টরি” মডেল কৃষি ও উৎপাদন খাতে AI প্রযুক্তির প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে AI নির্ভুল চাষাবাদে সহায়তা করে, যা উৎপাদনশীলতা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নত করে। এতে উৎপাদন চক্র দক্ষ হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি পরিবেশগত মান রক্ষা ও টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত হয়।
টেক্সটাইল শিল্পে AI এর প্রয়োগ
বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল শিল্পে AI বিপ্লব ঘটাচ্ছে, এবং এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা পূর্বাভাস দেওয়ার AI অ্যালগরিদম ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সহজ করে এবং অপচয় কমায়। 3D ইমেজ প্রসেসিং ও AR/VR প্রযুক্তির মাধ্যমে কাস্টমাইজড পোশাক ডিজাইন সম্ভব হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ায়। AI-ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা ছোট ব্যাচে, দ্রুত বাজারজাত করতে সাহায্য করে, যা ভোক্তার চাহিদার প্রতি দ্রুত সাড়া দিতে সহায়ক।
ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে AI
বাংলাদেশের ফার্মা খাতে AI ম্যানুয়াল কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও পুনর্মিলন প্রক্রিয়ার ত্রুটি কমাতে পারে। এটি প্রেডিকটিভ মেইন্টেন্যান্স ও নিয়ন্ত্রক মান রক্ষায় সাহায্য করে। রোগীর জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা ও চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদানেও AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর ফলে ওষুধ উৎপাদন নিরাপদ, উন্নত ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক হবে।
সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন
বাংলাদেশে AI প্রযুক্তির কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা জরুরি। বেসরকারি খাত প্রযুক্তি গ্রহণে নেতৃত্ব দিতে পারে, আর সরকার নীতিগত সহায়তা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে AI ব্যবস্থার বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক: মামুন রশীদ
চেয়ারম্যান, ফাইনান্সিয়াল এক্সেলেন্স লিমিটেড।
(এই লেখাটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক সম্মেলনে তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যের সংক্ষিপ্তাংশ।)