• হোম > অর্থনীতি | বাংলাদেশ > অর্থনীতি ধ্বংসের পেছনে ষড়যন্ত্র নাকি ব্যর্থতা?

অর্থনীতি ধ্বংসের পেছনে ষড়যন্ত্র নাকি ব্যর্থতা?

  • বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৮:০২
  • ২৩

 

 

 

 

 

 

---

ইবি ডেস্ক:

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। জনপ্রিয় খনার বচন “ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল দেবার গোঁসাই” যেন এখন বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে দেশের মানুষের কাছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পরিবর্তে এক শ্রেণির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর নীতিনির্ধারণ যেন অর্থনীতি ধ্বংসের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাত, যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি—সে খাতটিকেই যেন পরিকল্পিতভাবে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশের ৯৪% অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। অথচ এই খাতের উদ্যোক্তারা এখন নানাবিধ জটিলতার সম্মুখীন—মিথ্যা মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের হয়রানি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অনিয়ন্ত্রিত ও প্রতিহিংসাপূর্ণ পদক্ষেপের ফলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে।

 

দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেন একযোগে হয়ে উঠেছে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে এক কঠিন প্রতিবন্ধক। উচ্চ সুদের ঋণ, ডলার সংকট, জ্বালানি সমস্যা ও আমদানি-রপ্তানি জটিলতা মিলে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

 

সাম্প্রতিক সিপিডি’র প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, গত ছয় মাসে ২১ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে—এর ৮৬ শতাংশই নারী। এটা প্রমাণ করে, শিল্পকারখানাগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। উৎপাদন নেই, পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না, ঋণের কিস্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না—এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের বেতন কিভাবে দেবেন? অথচ শ্রম মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি দিচ্ছে—বেতন না দিলে জেল!

 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের কিছু সিদ্ধান্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়েও প্রভাব ফেলছে। এনবিআর বিভক্তি প্রক্রিয়া কিংবা বাজারের ওপর ডলার নির্ধারণের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া—এসব সিদ্ধান্তকে অনেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এতে করে দেশে বিদেশি ঋণনির্ভর অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত বিশ্বে সংকটে পড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার প্রণোদনা দিয়ে বাঁচায়। অথচ বাংলাদেশে ব্যবসায়ী শ্রেণিকে এক ধরনের অপরাধীর চোখে দেখা হচ্ছে। মিডিয়া ট্রায়াল, তদন্তের নামে হয়রানি, প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট জব্দ করে ব্যবসা পরিচালনার পথ রুদ্ধ করা—এসবই দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

 

বাংলাদেশের সফল উদ্যোক্তারা দেশীয় মেধা, শ্রম ও সাহসিকতার ওপর ভর করে আজ আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই আজ ষড়যন্ত্র চলছে—এমনটাই অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল করার যে প্রয়াস, তা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

 

বর্তমান বাস্তবতায় অর্থনীতির এই ভয়াবহ চিত্র শুধুমাত্র ভুল সিদ্ধান্তের ফলাফল, নাকি এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে—এ প্রশ্ন এখন সারাদেশের মানুষের মনে। একটাই স্পষ্ট—বেসরকারি খাতকে ধ্বংস করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। বরং প্রয়োজন সম্মান, সহযোগিতা ও স্থিতিশীল নীতির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো। অন্যথায়, বাংলাদেশ হয়তো আবারও দাতা নির্ভর এক ‘ভিক্ষুক জাতি’তে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে ।

 

 

 

 

 

ReplyForward

Add reaction


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3071 ,   Print Date & Time: Wednesday, 4 June 2025, 02:09:05 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh