• হোম > প্রধান সংবাদ > উদ্যোক্তাবান্ধব ইকোসিস্টেম গঠনে ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষা নিক বাংলাদেশ

উদ্যোক্তাবান্ধব ইকোসিস্টেম গঠনে ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষা নিক বাংলাদেশ

  • শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১৬:৫৮
  • ২০৭

ইন্দোনেশিয়া এগিয়ে যাচ্ছে স্টার্টআপ বিপ্লবে

জাহিদুজ্জামান সাঈদ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়া এখন বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদের চোখে এক নতুন সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। প্রায় ৩০ কোটি জনসংখ্যা, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দেশটি দ্রুতই উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নের গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
এক বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ড
ইন্দোনেশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৭,০০০টি দ্বীপ এবং ২০ লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা। এ বিশাল ভূখণ্ড একটি কেন্দ্রীয় হাব — জাভা দ্বীপ — কে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। জাভা দ্বীপ, বিশেষ করে রাজধানী জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতির হৃদয়স্থান হিসেবে বিবেচিত।

জাকার্তা: নতুন সুযোগের প্রাণকেন্দ্র
জাকার্তা কেবল ইন্দোনেশিয়ার নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক শহরে পরিণত হয়েছে। এখানে অবস্থিত বহু বহুজাতিক কোম্পানির সদর দপ্তর এবং বিশ্বখ্যাত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান যেমন: Golden Gate Ventures, Sovereign’s Capital, এবং Alpha JWC Ventures, প্রমাণ করে যে এই শহর নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এক সমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্ম।

কেন ইন্দোনেশিয়া উদ্যোক্তাদের জন্য আদর্শ?
নিম্নোক্ত চারটি মূল অন্তর্দৃষ্টিই ইঙ্গিত দিচ্ছে কেন ইন্দোনেশিয়া পরবর্তী বড় উদ্যোগের গন্তব্য:
১. বৃহৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তা বাজার
৩০ কোটির কাছাকাছি জনসংখ্যা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। একটি বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তাদের অভ্যস্ততা ই-কমার্স, ফিনটেক এবং এডটেকের মতো খাতে নতুন ব্যবসার জন্য দারুণ সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে।
২. উন্নয়নশীল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অবকাঠামো
সরকারের সহযোগিতা ও নীতিনির্ধারণী সহায়তার ফলে দেশজুড়ে প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্যোগ গড়ে উঠছে। “100 Smart Cities Movement” এবং “Making Indonesia 4.0″ উদ্যোগগুলো দেশটির ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত করেছে।
৩. ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও স্টার্টআপ বিনিয়োগ বৃদ্ধি
ইন্দোনেশিয়ার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির ইন্টারনেট ভিত্তিক অর্থনীতির মূল্য ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখানকার নতুন ধারণা ও উদ্যোগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
৪. স্থানীয় ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের সেতুবন্ধন
ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রীয় অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিন্দুতে রয়েছে। এর ফলে দেশটি উদ্যোক্তাদের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার এক আদর্শ ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাদের উদ্যোগ ও অগ্রগতিকে অনুকরণ করে বাংলাদেশেও উদ্যোক্তা পরিবেশকে গতিশীল ও টেকসই করা সম্ভব।

নিচে কয়েকটি কার্যকর উদ্যোগের সুপারিশ করা হলো যা বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য হতে পারে:
১. ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা
ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি শক্তিশালী ও সংযুক্ত ডিজিটাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য সরকার, বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার যৌথ অংশীদারিত্ব জরুরি।
২. স্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও বিনিয়োগ সংস্কৃতি গড়ে তোলা
বাংলাদেশে এখনও উদ্যোক্তারা পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পান না। স্থানীয় ভিসি ফান্ড তৈরি, ট্যাক্স সুবিধা প্রদান ও বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।
৩. উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ কেন্দ্র (Startup Incubators) গঠন
প্রতিটি বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে উদ্যোক্তা ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তুললে তরুণদের ধারণা বাস্তব রূপ নিতে পারবে। এখানে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, ফান্ডিং ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।
৪. তরুণদের উদ্ভাবন উৎসাহিত করতে জাতীয় উদ্ভাবনী চ্যালেঞ্জ বা প্রতিযোগিতা চালু
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে উদ্ভাবনী ধারণা সংগ্রহ করে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার, ফান্ডিং ও মেন্টরশিপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫. স্থানীয় সমস্যা নির্ভর স্টার্টআপ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি
বাংলাদেশের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো খাতে প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ গড়ে তুলতে সহায়তা দিতে হবে। সরকারী প্রকল্পের মাধ্যমে এই উদ্যোগগুলিকে পাইলট করার সুযোগও থাকতে পারে।
৬. উদ্যোক্তাবান্ধব নীতিমালা ও সহজ লাইসেন্স প্রক্রিয়া
স্টার্টআপ রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স ফাইলিংসহ সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সহজ, দ্রুত ও ডিজিটাল করতে হবে।
৭. বিশ্ববাজারে প্রবেশের সহায়তা ও সংযোগ
বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলোকে আন্তর্জাতিক এক্সপোজার দিতে ই-কমার্স, আইটি, কৃষি প্রযুক্তি ও ফিনটেক খাতে বৈদেশিক অংশীদারিত্ব, ট্রেড ফেয়ার এবং গ্লোবাল ইনোভেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

ইন্দোনেশিয়া শুধুমাত্র জনসংখ্যা বা ভূগোলের কারণে নয়, বরং এর উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তি গ্রহণে জনগণের আগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশসহ অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্যোক্তাদের জন্য ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা হতে পারে একটি কার্যকর অনুপ্রেরণা — কীভাবে জনসংখ্যাকে মূল শক্তিতে পরিণত করে উদ্যোক্তা পরিবেশ তৈরি করা যায়।
ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের দেখায় যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রযুক্তি ব্যবহার, বিনিয়োগ পরিবেশ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য সঠিক সহায়তা থাকলে — একটি উন্নয়নশীল দেশও উদ্যোক্তাবান্ধব পরাশক্তিতে রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশকেও এখনই উদ্যোক্তা বিকাশকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করে সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।উদ্যোক্তাদের হাতে শক্তি দিলে, দেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর।

লিখেছেনঃ
জাহিদুজ্জামান সাঈদ
এডিটর -ইন-চিফ
এন্টারপ্রেনিয়র বাংলাদেশ
[লেখক, গবেষক ও রুরাল ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্ট ]


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/3034 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 03:00:10 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh