মন্তোষ চক্রবর্তী :
আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বলতম এক নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এ দিনে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীত বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর তার রচিত গান (আমার সোনার বাংলা) বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। এছাড়াও তার অনেক গান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুপ্রাণিত করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের। কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, নির্দেশক কিংবা চিত্রকর উপাধিতে ভূষিত করা হয় রবি ঠাকুরকে। বিশ্বে তিনিই একমাত্র কবি যার রচিত গান দুটি দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি বর্জনও করেন এই কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অসামান্য। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। তার বিখ্যাত নাটক ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। তার বিখ্যাত উপন্যাস গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। প্রায় দেড় বছর কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালে ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। সংসার জীবনের পাশাপাশি চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় পার করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে যান বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃতু্যর পর প্রকাশিত হয়েছে।
লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। কবির মৃত্যুর পর বিশ্বভারতী থেকে ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পেয়েছে।
১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’। বাংলাদেশ থেকেও পাঠক সমাবেশ ও ঐতিহ্য ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ করেছে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী দীর্ঘ রোগভোগের পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ (ইংরেজি ৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।