• হোম > ঢাকা > অন্য এক ঢাকা, বৃষ্টিভেজা লকডাউন।

অন্য এক ঢাকা, বৃষ্টিভেজা লকডাউন।

  • শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১, ০৭:৪২
  • ৮১৩

---

নিজস্ব প্রতিবেদক

শুক্রবার। দিনভর বৃষ্টি। পুলিশের চেকপোস্ট। গ্রেপ্তার, জরিমানা। সেনা টহল। সবমিলিয়ে ঢাকার দৃশ্যপট ছিল অন্যরকম। রাস্তা ছিল প্রায় মানুষশূন্য। চলেছে অল্পকিছু ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা।

যারা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন তারাও পড়েছেন পুলিশের জেরার মুখে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দেয়ার পাশাপাশি হ্যান্ড মাইকে সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল ছুটির দিনেও গার্মেন্টস খোলা থাকায় শ্রমিকরা পায়ে হেঁটেই তাদের কারখানায় গেছেন। এতে তারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। আর যারা ব্যক্তিগত কাজে বের হয়েছেন তাদের যাতায়াতের বাহন ছিল রিকশা। লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশকে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে। সড়কের মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড বসিয়ে তারা যানবাহন তল্লাশি করেছে। যারা বের হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে পারেননি তাদের নামে করা হয়েছে মামলা। ঢাকার বড় তিন টার্মিনাল মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়াও বাইরে থেকে আসা কোনো যানবাহনকে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে কঠোর নজরদারি বসায় পুলিশ। শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহনগুলো ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে লকডাউনের মধ্যে বাইরে বের হওয়ার কারণে ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছে ২০৮ জনকে। বিধি ভঙ্গ করে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার কারণে ২১৯ গাড়ির বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মামলা। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. ইফতেখারুল ইসলাম জানান, সরকারের লকডাউনের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা পুলিশ শতভাগ কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে। লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে পুলিশ বদ্ধপরিকর।
গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, ফার্মগেট গাবতলী, মগবাজার, সেগুনবাগিচা, পল্টন, মতিঝিল ও কাকরাইল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে যে, প্রত্যেক এলাকায় পুলিশের কঠোর নজরদারি ছিল। সড়ক ছিল ফাঁকা। কিছু সড়কে তরুণদের ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে। প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকে এবং পল্টনের হোটেল ও রেস্তরাঁগুলোতে বসে খেতে দেখা গেছে। গতকাল পীরেরবাগে কাঁচাবাজারে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সরকার কর্তৃক উন্মুক্তভাবে কাঁচাবাজার বসানো কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। সেখানে মানুষজনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মানার কোনো বালাই ছিল না। অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলামের কাছে লকডাউনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশ বাজারে আসেনি। বাজারে আসা আব্দুস শহীদ নামে এক ব্যক্তি জানালেন, বাজারের মধ্যে প্রচণ্ড ভিড়। কারও মুখে মাস্ক নেই। এমনকি যারা বিক্রেতা তাদের মুখেও মাস্ক নেই। একই চিত্র ঢাকার কাওরান বাজার, ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের।
গতকাল ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও কাওরান বাজারে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। কারও কারও মুখে মাস্ক দেখতে পাওয়া যায়নি। পল্টন মোড়ে সুমন নামে এক রিকশাচালক জানান, লকডাউনের প্রথম দিনে কিছু ভাড়া পাওয়া গেছে। কিন্তু, আজ খালি যাচ্ছে। সড়কে লোকজন কম।
শাহবাগে সকাল ১১টার দিকে আরেফিন নামে এক যুবক জানান, তার এক স্বজন পিজি হাসপাতালে ভর্তি আছে। তিনি মহাখালীতে যাবেন কিন্তু যানবাহন না পাওয়ায় ১ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। রিকশাওয়ালারা দ্বিগুণ কেউ কেউ তিনগুণ ভাড়া চাচ্ছেন। তিনি বিআরটিসি বাস সড়কে নামার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
ট্রাফিক পুলিশ সোহান জানান, লকডাউন এবং শুক্রবার হওয়ার কারণে সড়কে লোকজন নেই। বিধিনিষেধ হওয়ার কারণে সড়কে যানবাহন নেই। এ ছাড়াও যারা গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন তাদের গাড়ি থামিয়ে কেন তারা বের হয়েছেন তা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
গতকাল সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের সামনে কয়েকজন পুলিশের দুটি ভ্যান দেখা গেছে। ওই টার্মিনাল থেকে কোনো বাস গন্তব্যস্থলে ছেড়ে যায়নি। কোনো বাস বাহির থেকে সেখানে ঢুকেনি। টার্মিনালের কাউন্টার বন্ধ। অনেকেই কাউন্টারে এসে বাস না পেয়ে গাবতলী ব্রিজের ওপারে গিয়ে রিকশা ও ভ্যান নিয়ে সাভার এলাকায় যেতে দেখা গেছে। আজিজুল নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর। গ্রামে জরুরি কাজে যেতে হবে। গাবতলীতে এসে দেখেন টার্মিনাল বন্ধ। সাভার থেকে কিছু নসিমন-করিমন যায় টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে। ওই যানবাহনে করে তিনি গ্রামে যাবেন। তবে গাবতলী সেতুর ওপারে পুলিশের শক্ত প্রহরা ছিল। কিছু ট্রাক ও লেগুনাকে তারা আবার উল্টো পথে ঘুরিয়ে দেন।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/2533 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 06:58:56 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh