• হোম > এক্সক্লুসিভ | এন্টারটেইনমেন্ট | দক্ষিণ আমেরিকা > অতীত মানেই সব ভাল, বর্তমান মানেই সব খারাপ, এটা মানি না: সুনিধি চৌহান

অতীত মানেই সব ভাল, বর্তমান মানেই সব খারাপ, এটা মানি না: সুনিধি চৌহান

  • শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১, ০৭:০২
  • ৮৬৯

সুনিধি চৌহান

অনেকেই মনে করেন ‘রকস্টার’ ইমেজের সঙ্গে মহিলারা ঠিক যান না। বিশেষ করে ভারতবর্ষে। কিন্তু সুনিধি চৌহান-কে স্টেজে দেখলে সেই ধারণা বদলাতে বাধ্য। কলকাতায় বাইপাসের ধারের পাঁচতারা হোটেলে, প্রেস মিটের পর একান্তে কথা বললেন সুনিধি। শুনলেন আসিফ সালাম

এখন চারদিকে রিয়্যালিটি শো নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। বহুবছর আগে ১৯৯৬ সাল নাগাদ, ‘মেরি আওয়াজ় সুনো’ নামক এক রিয়্যালিটি শোয়ে আপনি বিজয়ী হয়েছিলেন…

সেটাকে ঠিক রিয়্যালিটি শো বলা যায় না। তখন কোনও ভোটিং সিস্টেমও ছিল না। ‘মেরি আওয়াজ় সুনো’ ছিল একটি গানের প্রতিযোগিতা। সেই সময় সারা দেশে একটাই চ্যানেল ছিল। ‘ডিডি ১।’ আমার তখন সবে ১৩ বছর বয়স। তবে সেই শোয়ের ফলে আমি অনেক পরিচিতি পেয়েছিলাম। অনেক কানেকশনও তৈরি হয়েছিল।

অনেক কানেকশনের মধ্যে লতা মঙ্গেশকরের নামটাও তো ছিল?

হ্যাঁ। সত্যি বলতে কী, লতাজি আমার ভগবান। ওঁকে সামনে রেখেই গানবাজনা শুরু করি। ‘মেরি আওয়াজ় সুনো’-তে লতাজি ছিলেন অন্যতম বিচারক। ওঁকে কাছ থেকে দেখব বলেই এই প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলাম। মনে আছে, ফাইনালের দিন লতাজি ঠিক আমার সামনে বসেছিলেন। আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে,  মনে হচ্ছিল, ওঁর দিকে চোখ গেলেই নার্ভাস হয়ে কাঁদতে শুরু করব! তাই ফাইনালে গানটি গাওয়ার সময়, আমার চোখ ছিল মাটির দিকে। রেজ়াল্ট ঘোষণার পর আমার হাতে লতাজিই ট্রোফিটি তুলে দেন এবং আমি কান্না সামলাতে পারিনি। লতাজি আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, গানের জগতে কোনও সাহায্য প্রয়োজন হলে যেন ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি।

সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়। এখন একাধিক রিয়্যালিটি শোয়ে আপনাকে বিচারকের আসনে দেখা যায়…

আমার খুব নস্ট্যালজিক লাগে। যদিও এখন এই শোগুলোর প্যাটার্ন বদলে গিয়েছে। এখন অনেক তাড়াতাড়ি ফেম পাওয়া যায়। সুযোগও বেড়েছে। তবে তার সঙ্গে মারাত্মক কম্পিটিশনও রয়েছে।

শুধু তো রিয়্যালিটি শোয়ের প্যাটার্ন বদলায়নি, বলিউডে গানের ট্রেন্ডও বদলেছে। সেই বদলের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে অসুবিধে হয়নি?

না। কারণ আমি প্রথমদিন থেকেই জানতাম, চেঞ্জ ইজ় দ্য অনলি কনস্ট্যান্ট থিং ইন দিস ওয়র্ল্ড। তাই কেরিয়ারের বিভিন্ন স্তরে, আমি নিজেকে বদলেছি। আমি নিজেকে লাকি মনে করি যে এই একাধিক চেঞ্জ প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে পেরেছি। অর্থাৎ আমার কেরিয়ার স্প্যান অনেক লম্বা! আর সত্যি বলতে কী, আপনি যদি সময়ের সঙ্গে নিজেকে না বদলাতে পারেন, তা হলে আপনার কেরিয়ার কখনওই লম্বা হবে না। দশ বছর আগে সুনিধি চৌহান যতটা প্রাসঙ্গিক ছিল, আজও তাই আছে। এটাই আমার অ্যাচিভমেন্ট।

কিন্তু সব বদলই কি ভাল হয়? অনেকেই আছেন যাঁরা মনে করেন, বর্তমানে মেলোডি হারিয়ে গিয়েছে…

আমার মনে হয় না। বর্তমানে অনেক ট্যালেন্টেড মিউজ়িশিয়ান আছেন এবং তাঁরা যথেষ্ট ভাল কাজ করছেন। অতীত মানেই সব ভাল, আর বর্তমানে সব খারাপ, এই যুক্তিটা আমি একেবারেই মানি না।

তবে এটা তো মানবেন যে এখন প্রযুক্তি বেসুরো গায়কদেরও সুপারস্টার বানিয়ে দিচ্ছে। সাম্প্রতিককালে রানু মণ্ডল সহ আরও অনেক শিল্পী গানের ব্যাকরণ না জেনেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছেন!

দেখুন, সবকিছুরই পজ়িটিভ ও নেগেটিভ দিক আছে। এখনকার দিনে টেকনোলজির প্রয়োজন আছে। তবে সেটা কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা আপনার উপর। কেউ যদি টেকনোলজির মিসইউজ় করে, সেটা তার দোষ, টেকনোলজির নয়। হ্যাঁ আমি মানছি যে, টেকনোলজি নন-সিঙ্গারদেরও সিঙ্গার বানিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, আল্টিমেটলি কোয়ালিটি ম্যাটারস। শ্রোতারা গান শুনে সহজেই বুঝে যাবেন, কে সিঙ্গার আর কে সিঙ্গার নয়।

আপনার সম্পর্কে একটা কথা বলা হয়, ইউ অলওয়েজ় সেট দ্য স্টেজ অন ফায়ার। স্টেজে এত এনার্জি আনেন কোথা থেকে?

এটা নিয়ে ভাবা হয়নি! বলতে পারেন, আমিও মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যাই। স্টেজে দর্শকদের সামনে গেলেই আমার মধ্যে একটা ফোর্স কাজ করতে শুরু করে। মনে হয়, দর্শকরাই আমার সোর্স অফ এনার্জি। ওঁরাই আমাকে চার্জড আপ করে দেন। তাই কলেজ ফেস্টে পারফর্ম করতে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। কলেজ স্টুডেন্টরা হাই অন এনার্জি থাকে। তাই ওদের সামনে আমিও নিজেকে উজাড় করে দিই।

কলকাতায় এই নম্বর ওয়ান ইয়ারি জ্যাম কনসার্টে আপনি প্রথমবার অনুপম রায়ের সঙ্গে স্টেজ শেয়ার করলেন। এই শো তো পুরোটাই বন্ধুত্ব নিয়ে। আপনার কাছে বন্ধুত্বের গুরুত্ব কতটা?

বন্ধুত্বই তো সব। এই পৃথিবীতে বন্ধুত্বের চেয়ে ভাল সম্পর্ক আর কিছু হয় না। আমার মনে হয়, এই সম্পর্কের মধ্যে যতটা ভালবাসা থাকে, তা আর কোনও সম্পর্কের মধ্যে থাকে না। অনুপমের সঙ্গে আমার আলাপ হয় ‘পিকু’র সময়। সেখানে ওর সুরে আমি একটি গানও গাই। তখন থেকেই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব… এবং আমরা প্ল্যান করি একসঙ্গে কাজ করার। এই কনসার্টের জন্য আমরা বন্ধুত্ব নিয়েই একসঙ্গে একটি গান রেকর্ড করেছি। হি ইজ় আ ভেরি ট্যালেন্টেড মিউজ়িশিয়ান। আই উইশ হিম অল দ্য বেস্ট।

আপনার নামের পাশে এত গান রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কোন তিনটে গান স্টেজে পারফর্ম করতে সবচেয়ে ভাল লাগে?

এভাবে সিলেক্ট করা খুব কঠিন। তবে এখন ‘ধুম’, ‘বিড়ি জ্বলাইলে’, ‘দিদার দে’, ‘আ জ়রা’, এগুলোই মাথায় আসছে…

আর কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কোন গানটিকে বেছে নেবেন?

ইট হ্যাজ় টু বি ‘রুকি রুকি সি জ়িন্দগী’। এই গানটিই ছিল আমার কেরিয়ারের মেজর ব্রেক। গানটি রেকর্ড করার পর অদ্ভুত একটা তৃপ্তি অনুভব করেছিলাম।

আপনি তো অভিনয়ও করেছেন! শোনা যায়, আপনাকে নাকি বলিউডের বেশ কিছু ছবিতে নায়িকা হিসেবে ভাবা হয়েছিল কিন্তু আপনি সেগুলো রিজেক্ট করে দিয়েছেন?

হ্যাঁ। কেরিয়ারের শুরু থেকেই আমি অভিনয়ের অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। বলিউডের বড়-বড় ব্যানার থেকে অফার আসত। কিন্তু আমি সেগুলোতে কীভাবে কাজ করব? তখন আমার ১৪-১৫ বছর বয়স। প্রত্যেকদিন একটা করে রেকর্ডিং থাকত। স্কুলের ক্লাস বাঙ্ক করে রেকর্ডিং করতে যেতাম! গান গেয়েই সময় ম্যানেজ করতে পারছিলাম না, অভিনয়ের সময় কোথা থেকে পেতাম? তবে আমি ‘প্লেয়িং প্রিয়া’ নামক একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছিলাম। এছাড়া আর অল্প বয়সে, আমার বাবার সঙ্গেও স্টেজে অভিনয় করেছি। আমার বাবা থিয়েটার আর্টিস্ট। দিল্লিতে একটি প্রোডাকশনে উনি রামের চরিত্রে অভিনয় করতেন। একদিন ‘গৌরী’ নামক একটি বাচ্চা মেয়ের চরিত্রে যে অভিনয় করত, সে আসেনি। বাবা আমাকে স্টেজে তুলে দেন। তখন আমার চার বছর বয়স। আমার একটা দশ লাইনের সংলাপ ছিল সেটা সীতাকে বলতে হত। আমি পুরো সংলাপটা ঠিকঠাক বলেছিলাম। অভিনয়টাও মন্দ করিনি। কিন্তু কী করব বলুন, গান গাওয়ার পর আর সময়ই থাকত না যে!

গানের জগতে ভবিষ্যতের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?

কয়েকটা ভাল সিঙ্গল রেকর্ড করতে চাই। অনেক বছর হয়ে গেল ইন্ডিপেনডেন্ট মিউজ়িক নিয়ে‌ কাজ করা হয়নি। এখন ওটাই আমার সাধ।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/2525 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 05:39:02 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh