• হোম > এক্সক্লুসিভ | এস এম ই > এসএমই খাতে ‘ঋণ সংকট’

এসএমই খাতে ‘ঋণ সংকট’

  • মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:২৩
  • ১১১৯

আনোয়ার ফারুক তালুকদার

আনোয়ার ফারুক তালুকদার

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ৯ হাজার ২৭১ কোটি টাকা গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করতে পেরেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, শতকরা হিসাবে যা ৪৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় বেঁধে দিয়েছিল অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে বলা ছিল শিল্প খাতে ৫০ ভাগ, সেবা খাতে ৩০ ভাগ এবং ব্যবসা খাতে ২০ ভাগ ঋণ দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, দেশে শিল্প খাতের অবদান ৫০ শতাংশ নয়, তেমনি সেবা খাতের অবদানও ৩০ শতাংশ নয়। ফলে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে। দেখা গেল, ব্যবসা খাতে ২০ ভাগ বেশ কিছু ব্যাংক দিতে সক্ষম হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিবর্তিত আরেকটি নির্দেশনা দেয়, যেখানে বলা হয় শিল্প এবং সেবা খাত মিলিয়ে ৮০ শতাংশ করা যাবে। কিন্তু তাতে করেও প্রণোদনার ঋণ বিতরণে খুব একটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকারদের পূর্ববর্তী দাবির প্রতি নমনীয় হয়ে আবারও আরেকটি নির্দেশনা দেয়, যেখানে ব্যবসা খাতের বরাদ্দ ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়।

এই ১০ ভাগ বাড়ানোর পরেও শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। একদিকে যেমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, অন্যদিকে বৃহৎ শিল্পের বেশিরভাগ ঋণই প্রদান করা হয়ে গেছে। সম্প্রতি নতুন করে আরও সাত হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য- কেন ব্যাংকগুলো ক্ষদ্র ও মাঝারি খাতে প্রণোদনার ঋণ বিতরণ করতে পারছে না? তার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা চিহ্নিত করেছেন ঋণ বিতরণের খাতভিত্তিক বিভাজন। এক বিশ্নেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ঋণের ৬০ ভাগই হচ্ছে ব্যবসা খাত। এ কারণে ব্যাংকগুলোর ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো না থাকায় ঋণের চাহিদা তেমন করে বাড়ছে না।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণপ্রাপ্তিতে যে সীমাবদ্ধতাগুলো রয়েছে, সেগুলো দ্রুত দূর করতে হবে। একটি বিষয় নিয়ে নীতিনির্ধারকদের চিন্তা করা প্রয়োজন, তা হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণের সুদের চেয়ে ঋণটাই প্রাধান্য পায়। উদ্যোক্তারা কত সুদে পেলেন, সেটা তাদের সমস্যা নয়। ঋণ পাওয়াটাই হচ্ছে সমস্যা। এতে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রেখে এ খাত পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। নইলে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে বিকাশের ধারায় ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আয় ও সঞ্চয় সীমিত হওয়ায় যে কোনো অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাও কম। আশা করা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আরও দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ দ্রুতই বিতরণ সম্ভব হবে। এ ছাড়া খাতভিত্তিক বিভাজনকে আরেকটু নমনীয় করে দেখা যায় কিনা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। তবে ঋণ বিতরণের সময়সীমা মার্চ ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করার দাবিও জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে অনেক নমনীয় হয়েছে সময়ে সময়ে। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক এগিয়ে এসেছে, তাই ব্যাংকার এবং ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শিল্প এবং সেবা খাতের বরাদ্দকৃত ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ শিল্প এবং সেবা খাতই প্রকৃত অর্থে অর্থনীতির চালিকাশক্তি এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম খাত।

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্নেষক


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/2360 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 08:02:16 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh