• হোম > Agriculture & Food | Non-Governmental Organizations > সাকিবের মত যারা ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের’ চর্চা করে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেতে পেরেছেন

সাকিবের মত যারা ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের’ চর্চা করে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেতে পেরেছেন

  • বুধবার, ৫ আগস্ট ২০২০, ০৬:৫৪
  • ৯৫৪

সাকিব আল-হাসান

নওরীণ সুলতানা
লেখক, টরন্টো

শিক্ষা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা এ সবকিছু থাকার পরও একটি মানুষ নেতৃস্থানীয় পদে আসীন হয়ে অসফল হতে পারে, যদি না তার নিজের আবেগ, চাপ ও আশেপাশের মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ইতিবাচক শক্তিতে পরিচালিত করতে না পারে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের এই নতুন ধারনাটি আমাদের মাঝে ১৯৯০ সালে নিয়ে আসেন আমেরিকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক, জন ডি মায়ের ও পিটার সালোভে।

তবে এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয় তারও বছর দশেক পরে। বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এমন অনেকে আছেন যারা তাদের আবেগ, চাপ সবকিছু নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিয়ন্ত্রণ করে দলবল সঙ্গী করে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশ এই মুহূর্তে যে কটি দুর্যোগের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে তার একটি হলো, কোন রোল মডেল না থাকা। কিন্তু সার্বিকভাবে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে কেউ যদি থেকে থাকে তবে তিনি সাকিব আল হাসান।

সাকিবই বিশ্বের প্রথম যিনি তিন ধরনের ক্রিকেটেই অলরাউন্ডার হিসেবে ঘোষিত হন, যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত। সম্প্রতি ক্রিকেট বিষয়ক মাসিক পত্রিকা উইজডেন তাকে এক দিনের ক্রিকেটে শতাব্দীর দ্বিতীয় সেরা ক্রিকেটার হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সাকিব আল-হাসান: ”যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিকভাবে সুস্থ আছি, সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারবো।”

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জগতে সাকিব দেশের জন্য যে পরিমাণ সম্মান নিয়ে এসেছেন তা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি বললে ভুল হবে না। কিন্তু কীভাবে সমস্ত চাপ, দুশ্চিন্তা প্রতিকূলতাকে পাড়ি দিয়ে নিজের পারফরমেন্স দেখানোর পাশাপাশি সতীর্থদেরকেও সঙ্গে করে এই পর্যায়ে আসা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার জন্য যে কোন চাপ একধরনের উৎসাহ হিসেবে কাজ করে।

”আমাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে আমি আরো উদ্দীপনা অনুভব করি। আর এর থেকে উতরে আসার একমাত্র উপায় নিজের পারফরম্যান্স দেখানো। আমি জানি আমার উদ্দেশ্য কী। আর সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাই,” তিনি বলেন।

মাত্র সতের বছর বয়সে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন একদিন তার কোচ তাকে বলে, কাল থেকে আর হাত খরচের টাকা বাসা থেকে নিও না! সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সাকিব বাসা থেকে কোন আর্থিক সাহায্য নেন নি।

বরং ওই কিশোর বয়সেই বুঝে গিয়েছিলেন- তাকে তার ও তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। এরপর বাকিটা ইতিহাস!

তার পরিবার, বন্ধুরা তার জন্য একটি নি:শ্বাস নেয়ার জায়গা, যেখানে কেউ তার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে না। তিনি পত্রিকা পড়েন না। পাবলিক ফিগার হিসেবে অনলাইন ট্রোলিং বা বুলিং তাকে প্রভাবিত করে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ”মানুষ কী ভাবে তাও যদি আমি ভাবি তাহলে মানুষ কী ভাববে!”

ঠাণ্ডা মাথায় কঠিন সিদ্ধান্ত
সাকিবকে সবসময় শুধু ঠাণ্ডা মাথায় কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় তাই নয়, নিজেকে, দলকে এবং দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সুশীল। এই গুণ তিনি কীভাবে রপ্ত করছেন জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ”আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার সুযোগ সবচেয়ে বেশি আমারই হয়েছে যেমন কাউন্টি বা আইপিএলে খেলা। এই পরিবেশ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।”

সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করা সাকিব যেন এক জীবনে সবকিছু পেয়েছেন। সেই তিনি কিছুদিন আগে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটিও পেয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল তাকে এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

”আমার মনের জোর অনেক বেশি। এই ঘটনার পর আমাকে দেখে আমার আশেপাশের মানুষের বোঝার ক্ষমতা নেই আমার সঙ্গে কী হয়েছে। আমি যেকোনো সময় আমার জীবনকে শূন্য থেকে শুরু করার সাহস রাখি,” তিনি বলেন।

”আমি বিশ্বাস করি যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিকভাবে সুস্থ আছি, আমার আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে পারবো। আগে হয়ত ভাবনা ছিল আর তিন বছর খেলবো। কিন্তু এই ঘটনা আমাকে সাহস যুগিয়েছে, এখন আমি আরো পাঁচ বছর খেলবো,” বলেন সাকিব আল-হাসান।

ইয়াসির আজমান: ‘আমি সবসময় মানুষের ব্যাপারে আগ্রহী, নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আগ্রহী।”

এই বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করলো গ্রামীণফোন, যা কিনা পৃথিবীর অন্যতম সফল টেলিকম সংস্থা টেলেনর এর অঙ্গ সংগঠন। কোন বাংলাদেশির প্রধান নির্বাহী হওয়া নিয়ে এতোটা হইচই আগে কখনো হয়নি, যতোটা হয়েছে ইয়াসির আজমানকে নিয়ে।

টেলিকমিউনিকেশনের মতো প্রযুক্তি নির্ভর, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মুখোমুখি একটি বৈদেশিক সংস্থার প্রধান-এর পদ তিনি নিজেকে কী কী গুণের কারণে জয় করেছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ”আমি সবসময় মানুষের ব্যাপারে আগ্রহী, নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আগ্রহী, সেই সঙ্গে চেষ্টা করি উদ্দেশ্য ঠিক করে মানুষের সঙ্গে সমষ্টিগত মেলবন্ধন তৈরি করতে যা আমাকে সবসময় সাহায্য করেছে।”

ডিস্ট্রিবিউশন মডেল পুনর্বিন্যাস প্রকল্প
ইয়াসির আজমান জীবনে অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন নেতাদের জীবনী পড়ে। তিনি চেষ্টা করেন তার আশেপাশের ছোট হোক বড় হোক সবাইকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে। যা তাকে সাহায্য করে প্রতিটি মানুষকে দৃষ্টিসীমানার মাঝে তাদের দেখতে - যেখানে কেউ ছোট-বড় নয়।

পারস্পরিক সেই শ্রদ্ধাবোধ তখন কাজের গুণগত মানকে আরো অনেক বেশি বাড়তে সাহায্য করে তার জন্য।

দু’হাজার সাত-আট সালের দিকে প্রায় ৫০০-৬০০ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামীনফোনের ডিস্ট্রিবিউশন মডেলের পুনর্বিন্যাস প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রকল্পটি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তা সফল না হলে গ্রামীনফোন প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পিছিয়ে যেত। মাত্র ছ’সাত মাসে সবাইকে নিয়ে এক অসাধ্য সাধান করেন তিনি।

তৎকালীন প্রধান নির্বাহী তাকে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তা নিলেন না। তিনি মনে করেছিলেন এটি প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কর্মীর জয়।

তবে তার সেই নেতৃত্বই হয়ত আজ তাকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতে সাহায্য করেছে। আর তার জন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। সেই ক্ষেত্রে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স করা জানাতে পারাও অনেক জরুরি।

মানুষের ক্ষমতা অপরিসীম বলে মনে করেন ইয়াসির আজমান। তিনি নিজেও এখনো প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন। নতুনদের সঙ্গে কথা বলতে, কাজ করতে তা খুবই জরুরি। বিশেষ করে এই করোনার সময়ে যখন বইয়ের ভাণ্ডার পুরনো কথা বলে, অনলাইনে তখন প্রতিদিন অন্তত দু’টো লেখা পড়েন বর্তমান সময়ের পৃথিবীকে নিয়ে।

হাসিন জাহান: ”অনেক পুরুষের চাইতেও অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি।”

প্রায় ত০ বছর ধরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে নারীরা। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সরকার, বিরোধী দল এবং সংসদের স্পিকার একজন নারী। তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে নারী নেতৃত্ব এখনও অনেক দূরের বিষয় বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে খুব কম নারীই কর্পোরেট বা সামাজিক উন্নয়ন জগতে নেতৃত্বে উঠে এসেছেন। তাদেরই একজন আন্তর্জাতিক এনজিও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।

ব্যক্তিগত আর পেশাগত জীবন আলাদা
পারিবারিক দিক থেকে কোন সহযোগিতা ছাড়াই যিনি নিজেকে নিয়ে এসেছেন এ পর্যায়ে। কিন্তু তা তিনি কীভাবে পেরে উঠছেন জানতে চাওয়া হলে বলেন, যদিও মানুষের আবেগ থাকাই স্বাভাবিক, তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনকে বা তার কোন সমস্যাকে পেশাগত জীবনে কোন প্রভাব ফেলতে দেন নাই।

”বরং অনেক পুরুষের চাইতেও অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি,” তিনি বলেন।

হাসিন জাহান যেকোনো বিষয়েই প্রচুর প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন। তিনি মনে করেন পরবর্তী প্রজন্ম জ্ঞানের দিক থেকে আরো বেশি অগ্রসর হয়ে থাকবে। মনোযোগ, উপস্থিত বুদ্ধি এইসব কিছুর সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি যদি থাকে তবেই সাফল্য সম্ভব।

”জীবনে সবকিছুতে জিততে হবে এমন মানসিকতা না থাকাই ভালো। মাঝে মাঝে ব্যর্থতারও দরকার আছে। বরং না পাওয়ার কথা ভেবে যা পেয়েছে তাই নিয়ে কৃতজ্ঞ হলে প্রাপ্তির আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব,” বলেন হাসিন জাহান।

শেহজাদ মুনিম: ”জীবনে রোল মডেল থাকা অনেক প্রয়োজনীয়।”

কর্পোরেট জগতে যদি কোন প্রতিষ্ঠানের নাম নিতে হয়, তবে সবার আগে নাম আসে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর। ইম্পেরিয়াল টোবাকো নামে পূর্বপরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটি গত ১১০ বছর ধরে এই অঞ্চলে শুধু ব্যবসা করে আসছে তাই নয়, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দক্ষ কর্মী উপহার দেয়ার কৃতিত্বও তাদের।

এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে বিদেশীদের নেতৃত্বেই চলে আসছিল। তবে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে এই চিত্রটি পাল্টে দেন শেহজাদ মুনিম ২০১৩ সালে।

এই রোল মডেল হীন এমনি একটি সময় সম্প্রতি তিনি অতিবাহিত করে চলেছেন। লক-ডাউনের সময় তার কারখানা খোলা রেখেছেন সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকেছেন কারাখানায় শ্রমিকদের মাঝে।

এমনকি ঈদের দিনের রাতের খাবারও তিনি খেয়েছেন কারাখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে বসে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে। কাউকেই তার চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে হয়নি।

ফজর থেকে দিন শুরু
ভালো মানুষদের সবসময় নিজের চারপাশে ধরে রাখা, উদ্দেশ্য ঠিক রাখা এবং মন মানসিকতাকে সংকীর্ণ না রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম।

”জীবনে রোল মডেল থাকা অনেক প্রয়োজনীয়। যাকে অনুসরণ করা যায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনে রোল মডেলের পরিবর্তন ঘটে। আবার এমন এক সময় আসে যখন সেক্ষেত্রে কোন রোল মডেল খুঁজে পাওয়া যায় না যাকে অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার থাকা উচিত.” মি. মুনিম বলেন।

নিজের আবেগ, অনুভূতি, মনোযোগকে নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন তার ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রয়োগের কথা। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন এর ভিন্ন একটি দিক।

”একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ফজর থেকে যোহর অনেক লম্বা সময়। এই সময়টায় দেরী করে ঘুম থেকে না উঠে ফজর থেকেই দিন শুরু করা উচিত,” তিনি বলেন।

”আমাদের মস্তিষ্কও তখন সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে সক্রিয় থাকে। যা জরুরি সকল কাজে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।

”বিকেলে আসরের পর সহকর্মীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো, যা সামাজিক নৈকট্য তৈরি করে। মাগরিবের পর কোনভাবেই অফিসে না থাকা। বরং পরিবারকে সময় দেয়া, বলেন শেহজাদ মুনিম।

এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম: ”এই পেশায় সফল হতে অবশ্যই কিছুটা বেশি বুদ্ধিমান, পরিপক্ব ও জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন।”

পৃথিবীতে অন্যতম বিপদজনক ও চাপ প্রয়োগকারী পেশা হলো বিমানের পাইলট। শুনতে যতটা আকর্ষণীয় মনে হয় এই পেশা ততটাই সতর্কতা গ্রহণের চাহিদা নিয়ে আসে। আর তার জন্য চাই প্রতিটি মুহূর্তের শতভাগ মনোযোগ।

কারণ এখানে শুধু নিজের নয়, বহ মানুষের জীবন জড়িত একজন পাইলটের হতে। আর তাই নিরবিচ্ছিন্নভাবে বহু ঘণ্টা ধরে মনোযোগ ধরে রেখে বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাড়ি দেয়া এতো সহজ নয়।

”এই পেশায় সফল হতে গেলে কাউকে অবশ্যই কিছুটা বেশি বুদ্ধিমান, পরিপক্ব ও জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন যেকোনো সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য। তবে কে কীভাবে একটি সমস্যাকে সমাধান করবে তা ব্যক্তি নির্ভর,” বলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অবসরপ্রাপ্ত বৈমানিক এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম।

স্ত্রীর ক্যান্সার
মানুষের ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনে অনেক সমস্যাই থাকে। কিন্তু তার মাঝেও বিমান নিয়ে উড়াল দিতে হয় একজন পাইলটকে।

”আমার স্ত্রী ক্যান্সারের রোগী ছিল। যেহেতু এটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ তাই আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না বারবার স্ত্রীর জন্য ছুটি নেয়া। এমনও হয়েছে স্ত্রীকে হাসপাতালে কেমো দিতে বা অপারেশন করতে পাঠিয়ে আমি অন্যদিকে বিমান নিয়ে রওয়ানা দিয়েছি। সমস্ত দুশ্চিন্তাকে সামাল দিয়েই তা করতে হয়েছে,” তিনি বলেন।

”বেশি দুশ্চিন্তা ফ্যাটিগ তৈরি করে। যা একবার হয়ে গেলে আর বিমান চালানো সম্ভব না। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই মাথা ঠাণ্ডা রাখাই একমাত্র উপায়,” তিনি বলেন।

বৈমানিকদের এই মানসিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই বিশ্বজুড়ে ‘ক্রু রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ বলে একটি কোর্স রয়েছে যা প্রতি দু’এক বছরেই করতে হয়। এছাড়াও আরো কিছু কোর্স রয়েছে যা প্রতি ছ’মাসে করতে হয়।

মি. কাইয়ুম বলেন, এই কোর্স শুরু করার এক সপ্তাহ আগে থেকেই তিনি পড়াশোনা শুরু করেন যাতে সবার সঙ্গে এগিয়ে থাকতে পারেন।

আমাদের দেশে হয়ত একজন শেহজাদ মুনিম, এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম, হাসিন জাহান, ইয়াসির আজমান এবং সাকিব আল হাসানের মতো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু কেউ যদি তাদের মতো করে নিজেদের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সকে চর্চা করে - তবে এই সংখ্যাটি বাড়তে অবশ্যই বেশি দিন লাগবে না, এইটুকু আশা আমরা করতেই পারি।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/2142 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 04:14:15 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh