• হোম > রাজনীতি > আজ শোকাবহ ১লা আগস্ট

আজ শোকাবহ ১লা আগস্ট

  • শনিবার, ১ আগস্ট ২০২০, ০১:৪৮
  • ৯৫১

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান

আগস্ট মানে বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ আগস্ট। আজ বৃহস্পতিবার আগস্টের প্রথম দিন। শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপিত হবে বাঙালি।

শুরু হলো বাঙালির শোকের মাস আগস্ট।পৃথিবীর কোনো জাতির ইতিহাসে আমাদের মতো শোকাবহ আগস্ট আছে কিনা জানা নেই। আগস্ট দুর্বিষহ, গভীরতম শোকের মাস আমাদের জাতীয় জীবনে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর শোকের দিন। শোকের মাস আগস্ট। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নিহত বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাকতরা হত্যা করে। এরপর বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। দ্য টাইমস অব লন্ডন-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় সবকিছু সত্তে ও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।

পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল এবং পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিনী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন।

’৭৫-র ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের রায় কার্যকর করে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। একইভাবে বাঙালির আত্মঘাতী চরিত্রের অপবাদেরও অবসান ঘটেছে। টেলিগ্রাফ পত্রিকার মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পত্রিকাটি সেদিন সুদূরপ্রসারী মন্তব্য করেছিল। দেশের মানুষ এখন অনুধাবন করতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।

মাসটি এলেই তাই মনে পড়ে যায়, সেই ভয়াবহ স্মৃতি, যা আমাদের বেদনায় সৃষ্টি করে নতুন করে যন্ত্রণার। যে বিশাল হূদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি দীর্ঘ কয়েক যুগ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটো বোন শেখ রেহানা।

রক্তের ভেতরেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি শেখ হাসিনার। রাজনীতিতে নামার অভিপ্রায় তার ছিল না। পিতা জাতির মুক্তিদাতা। স্বাধীনতার স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার কন্যা। এ পরিচয়ই তো অনেক বড়ো। এ পরিচয়েই তারা পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। শোকের সাগর মাড়িয়ে তাকেই কিনা হাল ধরতে হলো ইতিহাসের এক যুগ সন্ধিক্ষণের। আগস্ট মাস এলেই জননেত্রী শেখ হাসিনা এক দুঃসহ স্মৃতির গহিনে চলে যান। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন প্রাণে বেঁচে যান। কারণ তারা দেশে ছিলেন না। মহান আল্লাহ পাকের অপার করুণা তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাঁক-ঘোরানো এক সিংহপুরুষ। বাঙালি জাতির চরিত্র সম্পর্কে তার চেয়ে বোধকরি আর কেউ জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোনো জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর এক তেজোদীপ্ত ভাষণেই উদ্বুদ্ধ গোটা জাতি বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বভাবনেতা। কি বাল্যে কি কৈশোরে কি মত্ত যৌবনে—সবখানেই ছিলেন তিনি এক কালজয়ী মহাপুরুষ। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিভাজ্য সত্তা। তাকে স্মরণ করার মধ্য দিয়েই শোকাবহ আগস্টের সূচনা। এই আগস্ট মাসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল ২০০৪ সালে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও শোকের মাসে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে করোনাভাইরাস সংকটের কারণে এবার প্রায় সব আয়োজন হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।

পাশাপাশি সীমিত উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতির পিতার সমাধি ও প্রতিকৃতি এবং বনানীতে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব থাকবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহযোগী সংগঠন এবং তৃণমূল আওয়ামী লীগও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আগস্ট মাসের কর্মসূচি পালন করবে।

এছাড়া ৫ আগস্ট জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে কর্মসূচিটি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা- জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না : জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। সর্দি-কাশি- জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়েও অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সবাইকে নিরাপদ রাখতে এমন নির্দেশনা সংবলিত নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার নির্দেশিকা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল পালনে পৃথক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশে সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নির্দেশনায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে- অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা ও নির্দিষ্ট করতে হবে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন স্থানে একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি মানুষ প্রবেশ করতে পারবেন না। আগত ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট দূরত্ব (তিন ফুট/কমপক্ষে দুই হাত) বজায় রেখে লাইন করে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করবেন এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে বেরিয়ে যাবেন।

সম্ভব হলে পুরো পথ পরিক্রমাটি চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করতে হবে। সমাবেশ আসা সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সর্দি-কাশি-জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাউকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ না করতে বলা হয়েছে।

অনুষ্ঠানস্থলে হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু, রুমাল বা কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যু ও বর্জ্য ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ঢাকনাযুক্ত বিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং জরুরিভাবে তা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

নির্দেশনায় আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল করার ক্ষেত্রে জনসমাগম যথাসম্ভব কম রাখতে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থল বা কক্ষের আয়তনের ওপর লোকসংখ্যার উপস্থিতি নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে আসা সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তিনি যেন অংশগ্রহণ করতে না পারেন। প্রবেশপথে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব না হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলে একজন থেকে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বসার স্থানটি নির্দিষ্ট করতে হবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/2123 ,   Print Date & Time: Saturday, 7 June 2025, 07:36:12 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh