• হোম > Non-Governmental Organizations > ধরা পড়ছে করোনার নতুন নতুন উপসর্গ, যে সব লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা

ধরা পড়ছে করোনার নতুন নতুন উপসর্গ, যে সব লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা

  • বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০, ২১:৫৯
  • ৯৪৮

---

নিজস্ব প্রতিবেদন

১
করোনা-হানায় নাকাল গোটা বিশ্ব। রোগ ঠেকানো তো দূরের কথা, নিত্যনতুন রোগের নানা উপসর্গই কালঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছে গবেষক-চিকিৎসকদের। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেশকাল ভেদে করোনার উপসর্গও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাথমিক যে সব উপসর্গের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, সে সবের ছাড়াও বেশ কিছু লক্ষণকে করোনার প্রকাশ বলে দাবি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।

২
করোনা সংক্রমণের উপসর্গের তালিকাটি তাই ইতিমধ্যেই দীর্ঘায়িত করেছেন সিডিসি-র গবেষকরা। তাঁদের মতে, এই সব লক্ষণ দেখা দিলেও সতর্ক থাকতে হবে রোগীকে। ধরে নিতে হবে, তাঁর করোনা সংক্রমণ হলেও হতে পারে। নতুন করে কী কী যোগ হলো তালিকায়?

৩
ব্রিটেনের চিকিৎসকদের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানিয়েছে, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা অর্থাৎ গন্ধ নিতে না পারার ক্ষমতাও করোনা সংক্রমণের একটি লক্ষণ। ব্রিটেনে হঠাৎ শুধুই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কয়েক জনের রক্তপরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। পরে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অটোল্যারিঙ্গোলজির তরফেও মার্কিন মুলুকে এমন পর্যবেক্ষণের কথা জানানো হয়েছে।

৪
কলকাতার চিকিৎসক গৌতম গুপ্তের মতে, এটা কিছুটা নতুন ধরনের পর্যবেক্ষণ। ব্রিটেনের এই গবেষণা প্রমাণ করে, অনেক ক্ষেত্রেই করোনার হানা গন্ধ নিতে সাহায্যকারী স্নায়ুগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এ দেশে এখনও এমন কোনও লক্ষণের হদিশ না পাওয়া গেলেও বিদেশের এই উপসর্গ মাথায় রেখেই এ বার রোগীর চিকিৎসা করা উচিত। কারও তেমন উপসর্গ দেখা দিলেই সচেতন হতে হবে। অন্য কোনও কারণে রোগীর এমনটা হচ্ছে, না কি করোনার জন্যই হচ্ছে তা জানতে করোনা পরীক্ষায় পাঠানো উচিত।

৫
কোভিড-১৯-এর নয়া উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে ত্বকেরও কিছু সমস্যা। মূলত, হাতে-পায়ে-বুকে পিঠে র‍্যাশজনিত সমস্যা। শিশু ও কমবয়সিদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দিচ্ছে বেশি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিড ফিট’। বিদেশি জার্নাল একে ‘অ্যাকিউট অ্যাক্রোইস্কিমিয়া’ বলেও ডাকছে।

৬
এই লক্ষণে হাত বা পায়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ জুড়ে ফ্রস্ট বাইটের মতো হয়। প্রথম প্রথম তা লালচে ফোস্কার মতো আকার নেয়। সেই অংশের রংও বদলে বদলে যায়। চুলকানিও থাকে। পায়ের পাতা, হাতের তালু, হাত-পায়ের আঙুলেই এই সমস্যা বেশি হয়। গবেষকদের দাবি, হাত-পায়ের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তবাহী নালির মধ্যে আণুবীক্ষণিক রক্তের ডেলা জমে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তাঁরা।

৭
ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ ঘটে চোখ লালচে হয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন চুলকোচ্ছে। কখনও বা ব্যথাও থাকছে। অন্য সময় হলে একে কনজাংটিভাইটিস বলে দেগে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যেত। কিন্তু এখন এতটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে কই! ‘দ্য জার্নাল অব দ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথ্যালমোলজি’-তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মোট কোভিড আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ১-৩ শতাংশের এই সমস্যা হয়।

৮

এই উপসর্গকে বিজ্ঞানীরা ডাকছেন ‘পিঙ্ক আই’ নামে। তবে গবেষকদেকর মতে, জ্বর, গলাব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট কিচ্ছু নেই, শুধু কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ আছে— এমন হলে তা ততটা ভয়ের নয়। কিন্তু করোনা উপসর্গগুলির মধ্যে যে কোনও একটি বা দু’টি লক্ষণের সঙ্গে পিঙ্ক আই থাকলে তা চিন্তার। সাধারণ পিঙ্ক আই দু’-এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কখনও আর একটু বেশি সময় লাগে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৌমাভ নাথের মতে, “কোভিড রোগীর পিঙ্ক আই সারতে আরও কিছুটা সময় লাগছে ঠিকই, তবে প্রয়োজন মতো একটু-আধটু ড্রপ দিতে দিতে তা সারে। এর জন্য চোখের কোনও স্থায়ী ক্ষতি হয় না।”

৯

এই সব উপসর্গের বাইরেও করোনাভাইরাস শরীরের দখল নেওয়ার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে আরও একটি লক্ষণ ফুটে উঠতে পারে বলে দাবি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। তাদের মতে, করোনা আক্রান্ত রোগীর কখনও কখনও দফায় দফায় কাঁপুনি হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সেই সঙ্গে রোগীর পেশী, অস্থিসন্ধি ও মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে।

১০

মাথা যন্ত্রণার বিষয়টি এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া রোগ-লক্ষণের তালিকায় ছিল। কিন্তু সেখানে গবেষকদের দাবি ছিল, এই মাথা যন্ত্রণা জ্বর ও কাশির সঙ্গে হাত ধরে আসে। এ বার বিজ্ঞানীরা জানালেন, শুধুমাত্র মাথার যন্ত্রণা ও পেশীতে ব্যথাও লক্ষণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

১১

‘হু’-এর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কোভিড-১৯-এর অন্যতম উপসর্গ ছিল ডায়েরিয়া। এ বার সেই উপসর্গ অনেকটা তেড়েফুঁড়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কোভিড আক্রান্ত অনের রোগীরই জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট কমলেও ডায়েরিয়া কিছুতেই কমছে না।

১২

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাটের মতে, বিশেষ করে, এই রাজ্যে এমন অনেক করোনা-রোগী আছেন, যাঁদের বেলায় এই ডায়েরিয়া দিয়েই রোগ-লক্ষণ শুরু হয়েছিল। অন্য কোনও উপসর্গ তেমন ছিলও না। কারও আবার হাসপাতালে থাকাকালীন অন্য উপসর্গ কমলেও ডায়েরিয়া কমতে সময় লেগেছে। সে সব রোগীর মল থেকেও রোগ সংক্রমণ ছড়ায়।

১৩

এসিই-২ রিসেপ্টারের মাধ্যমে শরীরে পা রাখে করোনা। তার প্রাচুর্য যেমন শ্বাসনালীতে আছে, আছে পাকস্থলি, অন্ত্রতেও৷ কাজেই একের বদলে অন্যটি আক্রান্ত হতেই পারে৷ এ দিকে ফুসফুসে ঢোকা জীবাণু বেরিয়ে গেলেও পেটে ঢুকলে সে চট করে বেরোনোর নাম করে না৷ ভুগিয়ে ভুগিয়ে ক্লান্ত, অবসন্ন, করে ফেলে৷ তাই এ সব লক্ষণ দেখা দিলেও সতর্ক থাকতে হবে বইকি!


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/1876 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 08:04:24 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh