• হোম > অর্থনীতি | এন্টারপ্রেনার | প্রধান সংবাদ | ফিচার | বিদেশ > সপ্তাহে অন্তত দুইদিন পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

সপ্তাহে অন্তত দুইদিন পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

  • বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০, ২৩:১৪
  • ১৭৫৯

আলহাজ্ব আব্দুস সালাম

জাহিদ ইউজেড সাঈদ

কথা হচ্ছিল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব আলহাজ্ব আব্দুস সালামের সাথে। তিনি বাংলাদেশ সেনিটারী ইমপেক্স ও এগ্রো মেশিনারী এন্ড স্পেয়ার্স এর স্বত্বাধিকারী। ঢাকার সিদ্দিক বাজারের আয়েশা প্লাজায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তিনি একজন আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ী। কমিটমেন্ট ও সততা যার ব্যবসার মূল মন্ত্র।কথা বলেন যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে ।ব্যবসায়ী হিসেবেও অভিজ্ঞতা রাখেন যথেষ্ট।তিনি বলেন, পন্য আমদানির পর ওয়্যার হাউজে পড়ে আছে। লকডাউনের ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ, সরবাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হবার কারণে চাহিদা থাকার পরও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ পন্য পাঠাতে পারছেননা।

গোডাউন এ পড়ে থাকা পন্য দুই ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে, প্রথমত: কিছু পন্য গুণগত মান হারাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত : এল সি র মাধ্যমে আমদানি করার পন্যের প্রতিদিনই ইন্টারেষ্ট যোগ হচ্ছে। যা ব্যবসায়ীদের উপর বোঝার মত চেপে বসছে। তিনি আরও বলেন, তার মত অনেক আমদানিকারকের সরকারের কাছে চাওয়া, ব্যাংকের ইন্টারেষ্ট মওকুফ ।তাতে করে হাজার হাজার আমদানিকারক ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।

মফস্বল এর ব্যবসায়ীদের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহ লাইন বন্ধ থাকার কারণে রিমোট এড়িয়াতে তাদের মজুদকৃত অনেক পন্য শেষের পথে। বিশেষ করে, কৃষি যন্ত্রাংশের স্পেয়ার পার্টস, পাম্প, স্যালোমেশিন ইত্যাদি। এগুলো জরুরী পন্যের তালিকাভুক্ত। উদাহরণ দিতে যেয়ে তিনি বলেন, কালিগঞ্জে একজন কৃষক থাকেন তার বাড়ীতে টিউবওয়েল বসাতে চান কিম্বা এখন নতুন ধান উঠার পর নতুন করে ধান রোপন করতে শেচ দিতে হবে। শেচ যন্ত্রের জন্য একটি বিয়ারিং দরকার অথবা টিউবওয়েল কিনবেন, এটির সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে কৃষক এটি কিনতে পারছে না এবং তিনি ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

নবাবপুর, সিদ্দিক বাজার এবং আলুবাজার মূলত এসবের আমদানিকারক ও হোলসেলার। তাদের চাওয়া সপ্তাহে অন্তত দুইদিন পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা । নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যদি ঢাকার বাইরে প্রয়োজনীয় মাল সামগ্রী ডেলিভাড়ী দেয়া যায় তাহলে ব্যবসায়ীরা স্থায়ী ক্ষতির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন এবং রিমোট এড়িয়াতে কৃষক তথা অন্যান্যরা উপকৃত হবেন বলে তিনি মনে করছেন ।

করোনা প্রাদুর্ভাবের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। এরই মধ্যে দেশের অন্তত ১৪টি খাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের প্রাথমিক হিসাব বলছে, আমদানি-রপ্তানি সংকুচিত হওয়ায় কয়েকটি খাতে অন্তত ৬০০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কাঁচামালের অভাবে দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার উৎপাদন সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একইভাবে কমে আসছে আমদানিনির্ভর পণ্যের সরবরাহ। বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন বলছে, ভবিষ্যতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ইতিমধ্যেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। নতুন করে এলসি খোলা তো হচ্ছেই না বরং পূর্বের করা এলসি পণ্যের জাহাজিকরণও বন্ধ আছে । বন্ধ রয়েছে ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়াও। করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড় মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ডে এক ধরণের ধাক্কা লেগেছে।

তার একটি বড় কারণ বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ শতাংশ আসে চীন থেকে।

এছাড়া অনেক খাতের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানির সিংহভাগ আসে চীন থেকে, আবার সেদেশে রপ্তানিও হয় বেশ কিছু পণ্য।

গত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৩৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আর রপ্তানি করেছে ৮৩ কোটি ডলারের পণ্য।

কোন খাতে কত ক্ষতির আশংকা:

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সরকারকে এক রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তাতে মোট ক্ষতির কোন পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

তবে, তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ শিল্প এবং ইলেক্ট্রনিক্সসহ মোট ১৪টি খাত চিহ্নিত করে বলা হয়েছে চীনের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি উভয় খাতে আর্থিক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

যেসব খাত কমিশন চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি দুই-ই রয়েছে।

সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আবু রায়হান আলবেরুনী বলেছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন কোন খাতে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বাণিজ্য হয়ে থাকে।

কোন খাতে কেমন ক্ষতির আশংকা তাদের রয়েছে তা নিয়ে বলছিলেন মিঃ আলবেরুনী -

* তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট খাতের ডাইং ও কেমিক্যাল এবং অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজের ৮০-৮৫ শতাংশ আমদানি নির্ভর এবং সেগুলো চীন থেকে আসে। এর বাইরে ওভেন খাতের ৬০ শতাংশ আসে চীন থেকে।

* গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ, প্যাকেজিং খাতে চার বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল দরকার হয়, এ খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।

* ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন রসুন, আদা, লবণ, মসুর ডাল, ছোলা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ আমদানি হয় চীন থেকে।

* ফিনিশ লেদার ও লেদার গুডস অর্থাৎ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য আঠা, ধাতব লাইনিং ও অ্যাক্সেসরিজের ৬০ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। এখাতে তিন হাজার কোটি টাকার মত ক্ষতি হবে।

* বাংলাদেশ থেকে সামুদ্রিক মাছ অর্থাৎ কাঁকড়া ও কুঁচে মাছ রপ্তানি হয়, এর ৯০ শতাংশই যায় চীনে

* ইলেকট্রিক্যাল, মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের ৮০-৮৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল চীন থেকে আসে,

* পাট স্পিনিং খাতে প্রতি বছর বাংলাদেশ চীনে পাট ও পাটজাত পণ্য ৫৩২ কোটি টাকার রপ্তানি করে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা নিরূপণের কাজ চলছে।

* মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস ও হসপিটাল ইকুয়েপমেন্ট তৈরি শিল্পের যন্ত্রাংশ চীন থেকে আমদানি হয়,

* কসমেটিক্স অ্যান্ড টয়লেট্রিজ খাতে প্রতি মাসে ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য আমদানি হয়, যা এখন বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল এবং চশমা শিল্পের বাজারও চীন নির্ভর। ট্যারিফ কমিশন বলছে এসব জায়গায় সরকারকে নজর দিতে হবে।

এক পরিসংখ্যানে জান যায়, দেশে ক্ষুদ্র পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাদের কর্মচারী ১৫ জনের নিচে এমন সংখ্যা ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠান। যা দেশের মোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৩৯ ভাগ। পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ৮৫ ভাগ। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন। তাদের প্রতি মাসে বেতন ১৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ট্রান্সপোর্টসহ ক্ষুদ্র পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জিডিপিতে ২৪ দশমিক ৬০ ভাগ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, সাধারণ ছুটিতে কেনাবেচা বন্ধ থাকায় তাদের দোকানগুলোর দিনে ক্ষতি হচ্ছে ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। তারা এ হিসাব করেছে একেকটি দোকানে গড়ে ২০ হাজার টাকা বিক্রি ধরে। আর লভ্যাংশ ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ।

এ হিসাব দিয়ে দোকান মালিক সমিতি কর্মচারীদের বেতন দিতে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, রপ্তানি খাতে মজুরি ও বেতন দিতে যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, তারাও আংশিক সহায়তা হিসেবে একই ধরনের তহবিল চায়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এজন্য ব্যাংকগুলো সময়মতো ঋণের কিস্তির টাকা পাবে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি ব্যাংকগুলো সদয় থাকবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র চেয়ারম্যান এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার।

তিনি বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে মনে হচ্ছে, করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা হয়তো আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে পড়বেন। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যাংকগুলো তাদের পাশে দাঁড়াবে।’


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/1782 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 06:08:52 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh