• হোম > এন্টারপ্রেনার | এস এম ই | ওমেন এন্টারপ্রেনার | স্টার্ট আপ > নারী উদ্যোক্তা: আছে সুযোগ, সম্ভাবনাও

নারী উদ্যোক্তা: আছে সুযোগ, সম্ভাবনাও

  • বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০, ১৩:৩৮
  • ১৭৮৪

নারী উদ্যোক্তা

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগে বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনীর আধিক্য দেখা গেলেও সীমিতসংখ্যক সেবা ও প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। এই মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের তুলনামূলক বেশি উপস্থিতি লক্ষণীয়। একটু গভীরে গেলেই বোঝা যায় যে সামাজিক, পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বলে অনলাইন উদ্যোগে নারীদের এই স্বচ্ছন্দ পদচারণা।

কোন ধরনের ব্যবসায় উদ্যোগী হবেন এই সিদ্ধান্ত নিতে যে বিষয়গুলো বিবেচ্য হওয়া উচিত তা হলো:

● জ্ঞান আহরণ এবং দক্ষতা

● নিজস্ব আগ্রহ

● অভিজ্ঞতা

● পুঁজির পরিমাণ

● প্রশিক্ষণ (অনলাইন, অফলাইন)

● বাজার চাহিদা

● সামাজিক, ব্যক্তিগত, সামষ্টিক সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা বা উদ্ভাবনী পন্থা

● ব্যক্তিগত যোগাযোগ

বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রধান বাধা হিসেবে যেটি বিবেচনা করা হয় তা হলো আমাদের সংস্কৃতি। যেখানে আমরা নারীকে একটি নির্দিষ্ট ভূমিকায় দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু সময় পাল্টেছে, বাস্তবতা এখন ভিন্ন। ৩০ বছর আগের বাংলাদেশের অর্থনীতি আর ২০১৮–এর অর্থনীতির হিসাব ভিন্ন। এখন পারিবারিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে সঙ্গে একজন নারী তাঁর সত্তাকে এই সমাজে সফলভাবে পরিচিত করে তুলতে সক্ষম।

দীর্ঘ ২০ বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার পর নানা হিসাব–নিকাশ সেরে ভালো লাগার কাজটিতেই মনোযোগী হয়েছেন নাঈমা মিতা। নিজস্ব আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ক্রেতাবলয়, অর্জন করেছেন আস্থা। শুরুটা স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ না হলেও তিন বছরে তাঁর পোশাকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘বুবুর বায়না’ পেরিয়েছে অনেক বন্ধুর পথ।

নাঈমা মনে করেন, অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে তাঁর এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে তাঁর ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিটিও দেয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, যেকোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।

গয়নাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আরটোপলিস’–এর কর্ণধার সুমাইয়া সায়েদ নিজের অভিজ্ঞতা মিলিয়েছেন অধিকাংশ নারী ও মা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে, যাঁরা একাধারে উদ্যোক্তা ও তাঁদের সন্তানদের প্রাথমিক অভিভাবক। নিজস্ব চেষ্টায় গড়ে তোলা ভালোবাসার কাজটিতে পারিবারিক দায়বদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা পূর্ণ সময় আর শ্রম দিতে পারেন না বলে তিনি মনে করেন।

তবে, অনলাইন ব্যবসার সুবিধাজনক দিক হলো ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ যা ব্যবহার করে তাঁদের আস্থার জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব। আর তাঁদের নমনীয়তাও প্রশংসাসূচক বলেই উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এই দুই সফল ব্যবসায়ী সহায়ক হিসেবে পাশে পেয়েছেন ‘মেয়ে নেটওয়ার্ক’কে, যুক্ত হয়েছেন নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ‘রাঙতা’র ‘হুটহাট’-এ। এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের দিকে সম্মান, সহযোগিতার হাত যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি প্রশিক্ষণ, উত্তরোত্তর উন্নয়ন ইত্যাদির এক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের স্বকীয়তা আর পণ্যের মান।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার আগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনে ইকোনমিক ক্যাডারে ৬ বছর কাজ করেছি। উন্নয়ন খাত এবং দেশসেরা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজসহ কর্মজীবনের দীর্ঘ ১২ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে খুব কাছ থেকে নারীদের চেষ্টা, বন্ধুর পথকে মসৃণ করার এক মনস্তাত্ত্বিক লড়াই দেখে এসেছি।

নবীন উদ্যোক্তারা কাজের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে পারেন:

* প্রাথমিকভাবে ব্যবসা শুরু করার পর একপর্যায়ে নিজস্ব পুঁজির ওপর নির্ভর না করে ব্যবসালব্ধ আয়ের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা চালিয়ে নিতে হবে।

* ব্যবসা–সংক্রান্ত সব দায়িত্ব একা পালন না করে বিশেষ বিশেষ জায়গায় লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন; আপনি নিজে যে একটি বা দুটি বিষয়ে পারদর্শী শুধু সেই কাজগুলোরই দায়িত্ব নেবেন।

* বাজারে প্রচলিত পণ্যের ব্যবসায় যাওয়া যাবে না এবং পণ্য নতুনই হতে হবে—এ ধারণাও যথার্থ নয়। বরং পণ্য বা সেবার স্বকীয়তার বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি।

* শুধু পণ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ না করে সামাজিক প্রয়োজন, সামষ্টিক উন্নয়নে সহায়ক সেবার প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

* কর্ণধার ও কর্মচারীদের মধ্যে আয়ের সুষম বণ্টন হওয়া চাই।

একজন সফল নারী উদ্যোক্তার উপলব্ধি দিয়ে শেষ করি। অনেকে হয়তো এই কথা থেকে প্রেরণা পাবেন—‘ব্যবসার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হলো সম্পর্ক তৈরিতে বিনিয়োগ, কেননা মানুষ শুধু পণ্যই কেনে না, একই সঙ্গে তাঁর সঙ্গে জুড়ে থাকা ব্যক্তি সত্তার নির্যাস আর মূল্যবোধ গ্রহণ করে; গুরুত্ব দেয় পণ্যের আড়ালে থাকা অভিপ্রায়কে।’

নারী উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ

নারী উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ মাস্টারকার্ড ইন্ডেক্স অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস ২০১৮—তে বাংলাদেশের অবস্থান:

২০১৭ ২০১৮ স্কোর পরিবর্তন ২০১৭ ২০১৮ র​্যাঙ্কিং পরিবর্তন

নারী ব্যবসা মালিকানা ২৫.৮ ২৫.৯ ০% ১৯ ১৮ ১

নারীদের অগ্রগতি ফলাফল ২৪.৩ ২৪.৩ ০% ৫৫ ৫৫ ০

জ্ঞান সম্পদ এবং অর্থায়ন অবস্থা ৪৭.৪ ৪৮.৮ ৩% ৫৭ ৫৭ ০

নারী উদ্যোক্তা সহযোগী শর্ত ৪০.৬ ৪১.৩ ২% ৫৬ ৫৬ ০

এই সূচকটি মোট ৫৭টি দেশের ওপর পরিচালিত যেখানে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থান ৫৭; যা ২০১৭ সাল থেকে আরও এক ধাপ পিছিয়েছে। অবাক করার বিষয় হলো, বাংলাদেশে নারী ব্যবসায় মালিকানা অন্য অনেক উন্নত রাষ্ট্রের তুলনায় বেশি। সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সরকারি, বেসরকারি সহায়তা এবং নারী উদ্যোক্তাবান্ধব নীতি প্রণয়ন আর তার যথাযথ বাস্তবায়ন এই সূচকে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/174 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 05:46:13 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh