• হোম > বিদেশ > করোনা যুদ্ধে যে ভাবে সফলতা পাচ্ছে জার্মানি।

করোনা যুদ্ধে যে ভাবে সফলতা পাচ্ছে জার্মানি।

  • মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল ২০২০, ২০:০৮
  • ৯৫৭

---

ফাতেমা রহমান রুমা
সম্পাদক
জার্মান বাংলা ২৪.কম

জার্মানি থেকে

বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় জার্মানির অবস্থান চতুর্থ। তারপরও দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম। দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য অনেক দেশে পরীক্ষা না করানোর কারণে দ্রুত বিস্তার ঘটছে; যেটি জার্মানিতে হচ্ছে না।

চীনের উহানে গত ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হওয়ার পর জার্মানিই প্রথম দেশ হিসেবে স্থানীয়ভাবে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি করে। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশটির বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে এই কিট উৎপাদনের অনুমতি দেয়া হয়। দেশটির একটি মাত্র কোম্পানিই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১৪ লাখের বেশি কিট সরবরাহ করে। যা পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেয়।

জার্মানির রোগ নিয়ন্ত্রন সংস্থা রবার্ট কখ্‌ ইনিস্টিটিউট-এর তথ্যমাফিক শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষের। মৃতদের মধ্যে ৮৬ শতাংশের বয়স ৭০ বা তার ঊর্ধ্বে। ইউরোপের ইতালি ও স্পেনের সঙ্গে তুলনা করলে জার্মানিতে এ মৃত্যুর হার অনেক কম। এ সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের চেয়ে জার্মানিতে মৃতের হার বেশ কম।

এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জার্মানিতে আইসিইউ’র সংখ্যা ২৮ হাজারের মতো ছিল করোনা সংক্রমণের আগে। এই রোগে যারা হন আক্রান্ত তাদের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হয়। গত কয়েক দিনে জার্মানি আইসিইউ’র সংখ্যা বাড়িয়েছে। এখন এর সংখ্যা ৩৮ হাজার। যেটি ফ্রান্স ও ইতালির মোট আইসিইউ’র সংখ্যার চাইতে বেশি। ফলে জার্মানিতে করোনা আক্রান্তদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু নিজের দেশের নাগরিক নয়, ফ্রান্স ও ইতালির রোগিদেরও জার্মানিতে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখের মতো লোককে করোনা টেস্ট করানো হচ্ছে। এই টেস্টগুলো হচ্ছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য বিমার আওতায়। ফলে শুরুতেই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। কাউকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে, কাউকে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। কাউকে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। ফলে ভাইরাস আক্রমণের শুরুতেই জার্মানিতে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃতের যে হার, জার্মানিতে তা অনেক কম। এখন পর্যন্ত জার্মানিতে মৃত্যুর হার এক দশমিক এক শতাংশ।

জার্মানির রবার্ট কখ্‌ ইনিস্টিটিউটের আরেক পরিসংখ্যানে জানা যায়, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ৭৪ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ আক্রান্ত হচ্ছেন ৭০ এর কম বয়সীরা। আর মারা যাচ্ছেন ৭০ উর্ধরা।

জার্মানিতে ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধের জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কনসার্ট, উপাসনালয় এগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাস্তায় দুই জনের বেশি মানুষকে হাঁটা চলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এই নির্দেশনা জার্মানি ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

মাস্কের ব্যবহারের ক্ষেত্রে জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, এটি হতে হবে এফএফপি টু মানের মাস্ক। কারণ এটি ব্যবহার করলে করোনাভাইরাস রোধ করা সম্ভব।

প্রবাসী বাংলাদেশী আক্রান্ত হলেও মৃত্যু নেই

এদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ‘জার্মানিতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নি। আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সিটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিত খবরা-খবর রাখছি।’

এছাড়া জার্মান সরকারের কঠোর নিয়মনীতি মেতে চলছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে ভুল ভিডিও প্রচার যেসব জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভালো নেই বলে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছেন তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, ভুল তথ্য দিয়ে জার্মানিতে বসবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আতঙ্কিত করবেন না।’’

রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখুন, সাবধানে থাকুন, সচেতন থাকুন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ২ জন এখনো আইসিইউতে ভর্তি আছেন, ৪ জন হাসপাতালে এবং ৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন।’


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/1597 ,   Print Date & Time: Sunday, 8 June 2025, 01:23:17 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh