• হোম > > সাভারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পোশাক শ্রমিক নিহত

সাভারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পোশাক শ্রমিক নিহত

  • সোমবার, ৬ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৩৬
  • ৮০৪

---

পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সাভারে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। এছাড়াও মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও শ্রমিকদের পৃথক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশসহ প্রায় ৩২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিন ব্যক্তি এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সাভারের কয়েকটি স্পটে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সকালে হেমায়েতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উলাইল এলাকার আন-লিমা গার্মেন্টসের সামনে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন সুমন মিয়া (২২)। তিনি ওই গার্মেন্টরই একজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সহকর্মীরা তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় একই কারখানার শমেস নামের একজন শ্রমিক এবং সকালে হেমায়েতপুরের ঘটনায় আরও দুই নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও জানান তারা।

সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, ‘সুমন মিয়াকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পরই চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেছেন। তার বুকে গুলি লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’

এদিকে ঘটনার পরপরই সাভার থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত সুমন মিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, ‘বিকালের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে শুনেছি।’

এদিকে এনাম মেডিক্যালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি)-এর ইনচার্জ ড. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শমেস, আঁখি বেগম ও রুবিনা বেগম নামে তিন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।’

আঁখি বেগম জানান, তিনি গার্মেন্টস কর্মী নন। হেমায়েতপুরে নিজের দোতলা বাসা থেকে সংঘর্ষের ঘটনা দেখছিলেন। সে সময় বাইরে থেকে একটি গুলি তার পেটে এসে লাগে।

রুবিনা বেগম বলেন, ‘আমি স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের যমুনা গার্মেন্টসে কাজ করি। হেমায়েতপুরে সকালে বিক্ষোভের পর ঘটনাস্থলের পাশের কলোনিতে আমার বাড়িতে যাই। সেসময় পুলিশ ওই এলাকায় যায় এবং তাদের একটি গুলি আমার ডান পায়ে লাগে।’

তবে গুলি করার কথা অস্বীকার করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। আশুলিয়ার ওদিকে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। আমার থানা এলাকায় এরকম কিছু ঘটেনি।’

লাশের প্রসঙ্গে ওসি আরও জানান, সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এনাম মেডিক্যালে ভর্তি দুই নারী এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ বলে হাসপাতালে অবস্থান করা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিক্ষোভের ব্যাপারে কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিকরা বেশ কয়েকবার মালিকপক্ষকে জানিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের কোনও সাড়া না পাওয়ায় গত দুদিন থেকেই আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার মূল ফটকের সামনে স্থানীয় হেমায়েতপুর-ট্যানারি সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে ব্যর্থ হলে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশসহ কমপক্ষে ২৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন।

এছাড়াও আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় প্রায় তিনটি কারখানার সামনে স্থানীয় সড়কে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদেরও ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয় বলেও জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।’ এছাড়া যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হক দিপু বলেন, ‘আমরা সারাদিন আজ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে কোনও সংঘর্ষ হয়নি। তবে শিল্প পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ঝামেলা হয়েছিল। শ্রমিকদের তারা সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। তবে তারা কেউ গুলি করেনি।’

এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কয়েকটি গার্মেন্টসের কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এটি ভুল বোঝাবুঝি। কোনও মহল শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়েছে। তারা আরও জানান, বেতন হলেই শ্রমিকরা বুঝতে পারবেন সরকারের ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়িত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর উত্তরা, দক্ষিণখান ও মিরপুরের কালশী এলাকাতেও বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সরেজমিনে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করলেও মালিকপক্ষ তা দিচ্ছে না বলে তাদের এই আন্দোলন।

তবে সংকট নিরসনে পোশাক কারখানার মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/1579 ,   Print Date & Time: Sunday, 8 June 2025, 06:30:42 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh