• হোম > Following > আগ্রহ আর মেধা থাকলেই ডেটা সায়েন্টিস্ট হওয়া যায়

আগ্রহ আর মেধা থাকলেই ডেটা সায়েন্টিস্ট হওয়া যায়

  • বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২০, ০০:২৬
  • ৯৪৭

আগ্রহ আর মেধা থাকলেই ডেটা সায়েন্টিস্ট হওয়া যায়

আপনি ছিলেন টেক্সটাইল প্রকৌশলী, ডেটা সায়েন্সে আগ্রহী হলেন কীভাবে?
রুবাইয়াৎ ইসলাম: আগ্রহটা কাকতালীয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১০ সালে যখন পিএইচডি করছিলাম, তখন একদিন হঠাৎ মনে হলো যে বেশ কবছর চাকরি করছি না। কর্মক্ষেত্রের অভাব বোধ করতে লাগলাম। সিভি বানাতে শুরু করলাম। বানাতে গিয়ে দেখি, আমার অভিজ্ঞতাগুলো একসঙ্গে করলে আমি ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে আবেদন করতে পারি। তা ছাড়া পিএইচডির ছাত্র হওয়ায় কিছু সুবিধাও হলো। কিছুদিনের মধ্যে চাকরি পেলাম ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্সে। তবে সায়েন্টিস্ট হিসেবে নয়, অ্যানালিস্ট হিসেবে। বলে রাখা ভালো, ডেটা সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে ডেটা অ্যানালিস্ট হওয়া। কিছুদিনের মধ্যে আমার কাজ দেখে তারা আমাকে সায়েন্টিস্ট হিসেবে পদোন্নতি দিল। আমি পড়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এখন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়)। সেখানকার সিলেবাস আমার ভিত গড়তে দারুণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে পরিসংখ্যান, প্রোগ্রামিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাথ শেখার বেলায়।

পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, নাসায় যোগ দেওয়ার আগে আর কোথায় কোথায় কাজ করেছেন?
রুবাইয়াৎ: বেশ কিছু জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরে কাজ করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে করেছি জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিএসএ)। সেখানে আমার তৈরি করা মডেলগুলো হোয়াইট হাউসে যেত। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড অ্যান্ড সিকিউরিটি, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, ইউনাইটেড স্টেটস পেটেন্ট অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অফিস (ইউএসপিটিও), ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স এবং আরও বেশ কিছু জায়গায় ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। আর যুক্তরাজ্যে কাজ করেছি মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার হিসেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশেও কাজ করেছি। মার্চেন্ডাইজার হিসেবে ছিলাম ক্যারিফোর ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট অফিসে এবং বেক্সিমকো টেক্সটাইলস লিমিটেডে প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।

নাসায় আপনি কোন ধরনের কাজ করেন?
রুবাইয়াৎ: একসঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হয়। সবচেয়ে সহজ প্রকল্পের একটি উদাহরণ হচ্ছে, নাসার মিশন কন্ট্রোলের যত প্রকল্প আছে, আমি সেগুলোর ইঞ্জিনিয়ারিং কস্ট এসটিমেশন, কি পারফরম্যান্স এসটিমেশন এবং প্রোডাকটিভিটি এসটিমেশনের জন্য গাণিতিক মডেল ডেভেলপ করছি। বাকি প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি নেই।

ডেটা সায়েন্টিস্টের কাজ কী?
রুবাইয়াৎ: একজন ডেটা সায়েন্টিস্ট ডেটা কালেকশন করবে, বিশ্লেষণ করবে, স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেল দাঁড় করবে, মডেল কোডিং করবে, ড্যাশবোর্ড ডেভেলপ করবে এবং অবশেষে চূড়ান্ত ফল জানিয়ে দেবে। এবং অবশ্যই বিজনেস ডোমেইনের ওপরও চূড়ান্ত জ্ঞান রাখবে। তবে এসবের অনেক কিছুতেই ছাড় দিতে হয়। কারণ, ভালো একজন ডেটা সায়েন্টিস্ট পাওয়া মানে একটি ইউনিকর্ন পাওয়া। নাসার জন্য যখন ডেটা সায়েন্টিস্ট নেওয়া হয়, তখন আমরা এই দক্ষতাগুলো আছে, তেমন কাউকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি।

বিগ ডেটা কী?
রুবাইয়াৎ: বিগ ডেটা মানে বেশি ডেটা। যখন ডেটার পরিমাণ পেটা বাইট, অর্থাৎ টেন টু দ্য পাওয়ার ফিফটিন বাইটে চলে যায়, তখন তাকে বলা হয় বিগ ডেটা। ডেটা সায়েন্সের মূল ব্যবহার হচ্ছে ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে পূর্বানুমান করা এবং যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা। ডেটা যত বেশি হবে পূর্বানুমান তত ভালো হবে। আর ঠিক এখানেই বিগ ডেটার উপযোগিতা বা ব্যবহার।

মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মতো বিষয়গুলো তো ডেটা সায়েন্সের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত…
রুবাইয়াৎ: মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডিপ লার্নিং—এগুলো সবই ডেটা সায়েন্সের অংশ। এগুলো না করে ডেটা সায়েন্স করা যায় না। সহজ করে বললে, এগুলো হচ্ছে পরিসংখ্যান–সংক্রান্ত এবং গাণিতিক পদ্ধতি, যা ব্যবহার করে মেশিনও মানুষের মতো করে ভাবতে পারে, শিখতে পারে এবং মানুষের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আপনি পড়াশোনা করেছেন কোন কোন প্রতিষ্ঠানে?
রুবাইয়াৎ: স্কুল ছিল মতিঝিল মডেল হাইস্কুল, কলেজ ছিল ঢাকা সিটি কলেজ। ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে টেক্সটাইল প্রকৌশলে স্নাতক শেষ করে বৃত্তি নিয়ে চলে যাই লন্ডনে। ভর্তি হই ইউনিভার্সিটি অব লিডসে। সেখানে এমবিএ এবং স্কটল্যান্ডের হেরিওট ওয়াট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর করি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং (ফ্যাশন ডিজাইন) বিষয়ে। তারপর স্কিল মাইগ্রেশনে কানাডায় চলে যাই। ন্যাচারাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ কাউন্সিলের (এনএসইআরসি) বৃত্তিতে ইউনিভার্সিটি অব ওন্টারিও থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করি। সেটা শেষে একই বৃত্তিতে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে মেকানিক্যালে পিএইচডি শুরু করি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির ফেলোশিপে যুক্তরাষ্ট্রে যাই। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যালে পিএইচডি শুরু করি। তখন আমার গবেষণার বিষয় ছিল থার্মাল এবং ন্যানোমেকানিকস। পরবর্তী সময়ে আমি ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, কলেজ পার্কে, পিএইচডি ট্রান্সফার করি এবং বর্তমানে ডেটা সায়েন্স বিষয়ে গবেষণা করছি। ডেটা সায়েন্স কম্পিউটার সায়েন্সেরই একটি অংশ।

তাহলে দাঁড়াচ্ছে, শুরুটা যে বিষয়েই হোক না কেন, যে কেউ ডেটা সায়েন্টিস্ট হতে পারে…
রুবাইয়াৎ: এটা খুবই সত্যি কথা। উন্নত দেশগুলোতে যে কেউ যা ইচ্ছা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে আমার এক সহকর্মী ছিলেন, যিনি বিবিএ করার পরে সিদ্ধান্ত নিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়বেন এবং চিকিৎসক হবেন। তিনি চিকিৎসক হয়েছেন এবং এখন ফ্লোরিডায় একটি হাসপাতালে সকাল-বিকেল রোগী দেখছেন। ডেটা সায়েন্স সে তুলনায় আরও বহুমুখী। সব ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ আছে। এ কারণে আগ্রহ আর মেধা থাকলেই ডেটা সায়েন্টিস্ট হওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে, একজন ডেটা সায়েন্টিস্টের গণিত এবং পরিসংখ্যানে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে। উচ্চমানের প্রোগ্রামিং এবং নেটওয়ার্কিংয়ে দক্ষতাও দরকার। ডেটাবেইস এবং ডোমেইন সম্পর্কেও জ্ঞান থাকতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহক যোগাযোগ দক্ষতা এবং অবশ্যই অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন। সত্যি বলতে কি, একজন ডেটা সায়েন্টিস্টের ব্যক্তিত্ব হতে হবে বিশ্লেষণাত্মক। আরও একটি ব্যাপার প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে পিএইচডি। সবাই জানেন, আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানী হতে হলে অন্তত একটি পিএইচডি লাগে। ব্যতিক্রমও আছে। প্রশ্ন হচ্ছে পিএইচডি শেষ না হওয়ার পরও কেউ কেউ কী করে বিজ্ঞানী হয়? ওই যে বললাম, ব্যতিক্রম। উন্নত দেশগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ জনশক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা বিশ্বাস করে, যার ভিত বৈচিত্র্যপূর্ণ, সে যেকোনো সমস্যার সৃজনশীল সব সমাধান বের করতে পারে।

চাকরির বাজারে ডেটা সায়েন্সের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ কেমন?
রুবাইয়াৎ: বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই দশকে পৃথিবী ডেটা সায়েন্সের পেছনে ছুটবে। এটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। এখন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারগুলোতে যখন বক্তৃতা দিই, তখন অনেক মেধাবী তরুণের সঙ্গে কথা হয়। তারা বাংলাদেশে ডেটা সায়েন্সের ওপর কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনাভিত্তিক ওয়েবসাইট গ্লাসডোর ডটকমের সূত্র অনুযায়ী, পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির বাজারে ডেটা সায়েন্স আছে সবার ওপরে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, নিউইয়র্ক টাইমস এবং আরও অনেকেই একে ‘বেস্ট জব’ এবং ‘হটেস্ট জব’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশি তরুণেরা এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আপনার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবে?
রুবাইয়াৎ: আমার একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট আছে (kindidata.com)। সেখানে আমি ডেটা সায়েন্স নিয়ে লেখালেখি করি। এ ছাড়া ফেসবুক তো আছেই।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/12 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 11:12:12 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh