• হোম > অর্থনীতি | এক্সক্লুসিভ > ব্যবসায়ীদের পাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ব্যবসায়ীদের পাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • শুক্রবার, ২০ মার্চ ২০২০, ০৬:৫৫
  • ১৩৬৮

---

কভিড-১৯ আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব অর্থনীতি। অর্থনীতি বাঁচাতে এরই মধ্যে রাজস্ব ও নীতিসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। তবে রাজস্ব সহায়তা নয়, আপাতত নীতিসহায়তা নিয়েই দেশের উৎপাদনমুখী শিল্প খাত ও ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের অর্থ পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি করা হবে না। একই সঙ্গে রফতানির অর্থ দেশে আনা ও আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ ৬০ দিন করে বাড়ানো হয়েছে। ১৮০ দিন বাড়ানো হয়েছে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ারর্স ক্রেডিটের মেয়াদ। রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৯০ দিন। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব সুযোগ-সুবিধা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নীতিসহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিসহায়তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনীতির ক্ষতি পোষাতে শুধু নীতিসহায়তা যথেষ্ট নয়। এজন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজস্ব সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার (রেপো) কমানোর পাশাপাশি দরকার হবে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে যে ছাড় দেয়া হয়েছে, তাতে ব্যাংকের মুনাফা কমবে।

করোনার প্রভাব থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাঁচাতে গতকাল দুপুরে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ। বিভাগটির মহাব্যবস্থাপক মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণীমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।

এর ফলে বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা যদি ৩০ জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে খেলাপি করা হবে না। তবে যদি কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করেন, তাকে নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমদানি-রফতানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধে সক্ষম হবেন না বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এতে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত এবং দেশে সামগ্রিক কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণীমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই মানেই রাখতে হবে। এর চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের শ্রেণীমানের উন্নতি হলে তা যথাযথ নিয়মে শ্রেণীকরণ করা যাবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘বৈদেশিক মুদ্রানীতি’ বিভাগ থেকে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিভাগটির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশিদ ওয়াহাব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রফতানি পণ্যের মূল্য দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য রফতানিকারকরা চার মাস সময় পান। রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের দিন থেকে এ সময় গণনা শুরু হয়। এখন থেকে রফতানিকারকরা অর্থ প্রত্যাবাসনের জন্য চার মাসের সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ৬০ দিন সময় পাবেন। তবে এ ধরনের মেয়াদ বাড়ানোর পর ব্যাংকগুলো তত্ক্ষণাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়কে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে রফতানিকারকের নাম, ইএক্সপি নম্বর, অর্থ পরিশোধের প্রত্যাশিত তারিখ, মেয়াদ বাড়ানোর কারণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে।

রফতানি বিল প্রত্যাবাসনের মতো আমদানির ক্ষেত্রেও পণ্য দেশে পৌঁছানো ও মূল্য পরিশোধের জন্য চার মাস সময় পান আমদানিকারকরা। এক্ষেত্রেও বিল অব এন্ট্রির দিন থেকে চার মাসের সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ৬০ দিন সময় দেয়া হয়েছে। রফতানির মতোই আমদানিকারকদের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জানাতে হবে।

ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের মেয়াদ হলো ১৮০ দিন। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে গ্রাহক-ব্যাংক সম্পকের ভিত্তিতে এ মেয়াদ আরো ১৮০ দিন বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের ওপর গ্রহণযোগ্য সুদহার আরোপের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

রফতানিকারকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ হয় ৯০ দিন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রতিনিয়ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আদেশ বাতিল হচ্ছে। ফলে ইডিএফ তহবিল থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময় ১৮০ দিন পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া ব্যাংকগুলো রফতানি বিলে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিতে পারত। এখন থেকে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ১০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তার বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তাগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি কমানো ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। সাময়িক বিপর্যয় সামাল দেয়ার জন্য এটি মেনে নেয়া যায়। কিন্তু আমরা এখনো জানি না, করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগ কতদিন দীর্ঘায়িত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে ঢালাওভাবে সব গ্রাহকের জন্য প্রযোজ্য হবে। যদিও এ প্রজ্ঞাপনের সুবিধা এমন গ্রাহকরাও দাবি করবেন, যারা প্রকৃত অর্থে ইচ্ছাকৃত খেলাপি কিংবা যাদের ঋণ এরই মধ্যে খেলাপি হওয়ার পথে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের প্রভাবে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির অবনতি হবে। আগামী ছয় মাস গ্রাহকরা ব্যাংকের টাকা দিতে চাইবেন না। এতে ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো অনেক কমে যাবে। অনেক ব্যাংকের পক্ষে নতুন ঋণ দেয়ার পরিস্থিতি থাকবে না। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফাও কমবে। দেশের অর্থনীতিকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার থেকে নীতিসহায়তার পাশাপাশি রাজস্ব সহায়তাও দরকার।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/1139 ,   Print Date & Time: Sunday, 12 October 2025, 02:14:47 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh